সমাজের ‘অসুস্থতাগুলো’ দূর করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজের এই ‘অসুস্থতাগুলো’ দূর করতে হবে।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব মাদ্রিদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 03:54 AM
Updated : 2 Dec 2019, 05:08 AM

জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে তিন দিনের সফরে স্পেনে পৌঁছে রোববার সন্ধ্যায় মাদ্রিদের হোটেল ভিলা ম্যাগনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস দমন, জঙ্গি দমন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যে অভিযান শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে।

“সৎ পথে কামাই করে লবণ ভাত খাওয়াও ভালো অসৎ পথে বিরানি খাওয়ার থেকে। এটা আমি মনে করি। যা জাতির পিতা শিখিয়েছেন। আমাদের সেইভাবে প্রজন্মকে শিখিয়ে যেতে হবে।”

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানের দিকে ইংগিত করে সরকারপ্রধান বলেন, “ঘুষ, দুর্নীতি করে কিংবা ছিনতাই, সন্ত্রাস করে টাকা বানিয়ে সেই টাকা দিয়ে একেবারে ফুটানি দেখিয়ে মনে করত ‘আমরা যেন কি হয়ে গেছি!’ মানে ‘মুই কি হনুরে’ ভাব।

“এই মানসিকতা যেন না থাকে। সমাজের এই সমস্ত অসুস্থতা… এগুলো আমাদের ঠিক করতে হবে।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের অপকর্মের কারণে সমাজে মানুষের চারিত্রিক স্খলন হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, তার সরকারের সময়ে বাংলাদেশ এখন আবার সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

“এখন অন্তত বিদেশের মানুষ বাংলাদেশের নাম শুনলে মর্যাদা দিয়ে কথা বলে। আগে নাম শুনলেই বলতো দুর্ভিক্ষের দেশ, বন্যা, খরার দেশ, দুর্নীতিতে দেশ। কারণ বিএনপির আমলে পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। এখন আর সে বদনামটা আমাদের নাই।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে এখন অনেকেই তার কাছে জানতে চান- সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়নের ‘ম্যাজিকটা’ কী?

“আমি বলি ম্যাজিকটা কিছু না। দেশকে ভালবাসি, মানুষকে ভালবাসি। আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি। দেশের কল্যাণে কাজ করা। আমার আর কোনো কাজ নেই। বাংলাদেশের জনগণের হোল টাইম ওয়ার্কার আমি।

“আমি দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাই। তার শুভ ফলটা দেশের মানুষ পাক। এটা শুধু নগরভিত্তিক না, একেবারে গ্রামের তৃণমূল মানুষ যেন পায় সেটা আমরা নিশ্চিত করি।”

দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথাও প্রধানমন্ত্রী মাদ্রিদের এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “প্রবাসী যারা আছেন, আপনাদের যথেষ্ট অবদান আমাদের এই উন্নয়নে। আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে, আমাদের নিজেদের ব্যাংকের টাকা দিয়ে আমরা ড্রিমলাইনার কিনলাম। অন্য ব্যাংক থেকে… বিদেশ থেকে আমরা ধার নেব কেন? আমাদের ব্যাংকের টাকা দিয়ে আমরা করব। কাজেই এখানে আপনাদের বড় অবদান রয়েছে।”

আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে সারাদেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কথা তুলে ধরে দলীয় সভাপতি বলেন, “জাতির পিতা বলেছেন- ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।”

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি এখন অনেক ইলেকশন নিয়ে কথা বলে। ইলেকশনের ভালো-মন্দ খুঁটে দেখে। ওরা আয়নায় চেহারা দেখে না। জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের ‘না’ বাক্স তো কোনদিন খুঁজেই পায়নি, সব ‘হ্যাঁ’ বাক্স। সেখানে সবাই ‘হ্যাঁ’ই দিয়ে গেছে।

“তারপর তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ১২০ ভাগ না ১৩০ ভাগের উপর ভোট পড়ে গিয়েছিল। তারপর সেটা কমানোর চেষ্টা। এরপর আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দল একটা বানালো, তারাই টু থার্ড মেজরিটি পেয়ে গেল। আওয়ামী লীগের মাত্র ৩৯টা সিট।”

“একটা পার্টি বানালো… মানে একটা বাচ্চা জন্ম নিল। হাঁটতেও শিখলো না, চলতেও শিখলো না। ওমনি টু থার্ড মেজরিটি পেয়ে গেল। আর আওয়ামী লীগ সেই ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দল, তারা সিট পায় না!”

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে ‘লুটপাটের রাজত্ব’ তৈরি হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি, অস্ত্র চোরাকারবারি… ১০ ট্রাক অস্ত্র তো ধরা পরলো।  একটা ধরা পড়েছে। এরকম যে কতবার অস্ত্র চোরাকারবারি- তারা আমাদের বাংলাদেশকে ব্যবহার করেছে, তার তো হিসাব নেই। গোটা দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।“

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্পেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস আর আই এস রবিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. রিজভী আলম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো.শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাছান মাহমুদ খন্দকার উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।