সেই আইএস টুপির খোঁজ মেলেনি, ডিবির তদন্তে আরও সময়

গুলশান হামলার মামলার আসামির মাথায় আইএসের চিহ্ন সম্বলিত যে টুপি দেখা গিয়েছিল, তার কোনো সন্ধান মেলেনি; এই টুপির উৎস খুঁজতে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে আরও সময় লাগছে।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2019, 06:08 PM
Updated : 1 Dec 2019, 06:08 PM

গত ২৭ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটিকে রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও তারা তা পারেনি।

কমিটির প্রধান যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মাহবুব আলম রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা আরও তিন দিন সময় নিচ্ছেন।

“আমরা তদন্ত করছি বিভিন্ন তথ্য-উপত্ত সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। বাড়তি যে সময় নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশাবাদী।”

এই ঘটনা তদন্তে কারা কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি শনিবারই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারা বলছে, আসামিরা কারাগার থেকে যাওয়ার সময় তাদের কাছে টুপি ছিল না।

তবে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করে আসছেন, ওই টুপি কারাগার থেকেই নিয়ে এসেছিলেন আসামিদের কেউ।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ে গত বুধবার সাত আসামির মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের পর আদালত কক্ষেই আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানের মাথায় দেখা যায় একটি কালো টুপি, সেখানে আইএস এর পতাকার ঢঙে আরবি লেখা। পরে আসামিদের কারাগারে নেওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে আরেক আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর মাথাতেও একই ধরনের টুপি দেখা যায়।

বন্দির মাথায় আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি দেখে ব্যাপক সমালোচনা ওঠায় তার তদন্তে কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ আলাদা কমিটি গঠন করে।

ডিবির তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা সব আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।  তবে আলামত হিসাবে  টুপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

“রিগ্যান বলেছে, রায়ের পর আদালত থেকে কারাগারে আসার পথে প্রিজন ভ্যানের ছোট ফুটো দিয়ে টুপিটি ফেলে দিয়েছে,” বলেন তিনি।

রায়ের আগে কারাগার থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী কিংবা রাকিবুল হাসান রিগ্যান কারও মাথায়ই ছিল না কোনো টুপি

ওই দিন কেরানীগঞ্জ কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলামও বলেছিলেন, তারা রায়ের পর আসামিদের ভেতরে ঢোকানের সময় সেই টুপি পাননি।

কারাগার থেকে বের করার সময়ও তেমন কোনো টুপি আসামিদের সঙ্গে ছিল না বলে কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির ভাষ্য।

কারাগারের তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ডিআইজি টিপু সুলতান শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তাদের গঠিত তদন্ত কমিটি কারাগার থেকে কোন টুপি যাওয়ার প্রমাণ পায়নি।

রায়ের আগে হাজতখানা থেকে এজলাসে নেওয়ার সময় রাকিবুল হাসান রিগ্যান মাথায় দেখা যায় একটি কালো টুপি, তবে তাতে কোনো লেখা ছিল না

তবে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, “কারাগারে গিয়ে আসামিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কারাগার থেকেই টুপিটি আদালতে নিয়ে গিয়েছিল। রিগ্যান টুপিটি পকেটে করে নিয়ে যায়।”

তিনি বলেন, রিগ্যানের মাথায় একটি কালো টুপি ছিল এজলাসে তোলার সময়। ওই টুপিটি পরে রিগ্যান উল্টো করে পরে, যাতে আরবি লেখা ছিল।

এত পুলিশ সদস্য থাকার পরও তখন টুপিটি নজরে না আসার কারণ জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, “জিজ্ঞাসবাদে অনেকেই বলেছেন টুপি বা ঘাড়ে থাকা রুমালের প্রতি তাদের কোনো দৃষ্টি ছিল না। তারা তখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল নিরাপত্তার বিষয়ে।”

রায়ের পর বেরিয়ে আসার পথে রাকিবুল হাসান রিগ্যানের (ডানে) মাথায় দেখা যায় আইএসের চিহ্ন সম্বলিত কালো টুপি, পরে সেই টুপি প্রিজন ভ্যানের ভেতরে জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীর মাথায়ও দেখা যায়

ডিবির তদন্ত কমিটি আদালত প্রাঙ্গণে সেদিন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য, প্রিজন ভ্যানের থাকা পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে।

মাহবুব আলম বলেন, “কারাগারের ভিডিও ফুটেজ, আদালত প্রাঙ্গণের ভিডিও ফুটেজ ছাড়াও অনেকের ব্যাক্তিগত মোবাইলে ধারণা করা ভিডিও ফুটেজ, সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত চলছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।”