সাক্ষ্য দিলেন দীপনের স্ত্রী

প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যামামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2019, 01:46 PM
Updated : 1 Dec 2019, 01:46 PM

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বাদী রাজিয়া ও সাক্ষী আনোয়ার হোসেনের সাক্ষ্য নেওয়ার মধ্য দিয়ে রোববার এই হত্যামামলাটির বিচার শুরু হল।

গত ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের পর ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ধার্য হলেও সমন পাননি বলে সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন বাদী রাজিয়া। তখন ১ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ দিয়েছিলেন বিচারক মজিবুর রহমান।

রোববার আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেন ডা. রাজিয়া।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শ্বশুর অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের কাছে হত্যাকাণ্ডের খবর পান তিনি। তারপর ছুটে যান শাহবাগে আজিজ মার্কেটে, সেখানে তাকে নিয়ে বসিয়ে তার শ্বশুর যান দীপনের জাগৃতি প্রকাশনের কার্যালয়ে। বন্ধ করা দরজা খুলে দীপনের রক্তাক্ত লাশ পান তার বাবা।

দীপনের ঘাড়ে কোপের চিহ্ন থাকার কথা জানিয়ে তার স্ত্রী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছিল। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে লাশ এনে দাফন করা হয়। এরপর ২ নভেম্বর তিনি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

লেখক-প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর ধারাবাহিক হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে আক্রান্ত হন দীপন। তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

একই দিন রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হানা দেয় দুর্বৃত্ত দল। তারা প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসুকে কুপিয়ে আহত করে।

তার আগে ওই বছরই বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা চলার সময় টিএসসিতে কুপিয়ে হত‌্যা করা হয় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। জাগৃতি ও শুদ্ধস্বর দুই প্রকাশনা থেকেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিতের বই প্রকাশিত হয়।

ফয়সল আরেফিন দীপন

দীপন হত্যার ঘটনায় মামলার পর দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান গত বছরের ১৫ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। 

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম দীপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের নেতা সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই দীপনকে হত্যা করা হয়।

আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর রাজিয়াকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন, সাইফুর রহমান সবুজ।

জেরার এক পর্যায়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন দেখে আইনজীবীদের থামিয়ে দেন বিচারক। জজ মজিবুর রহমান বলেন, “উনি স্বামী হারিয়ে একবার যন্ত্রণা পেয়েছেন, অপ্রাসঙ্গিক জেরা তাকে আপনারা আবার কষ্ট দেবেন!”

সাক্ষ্য দিতে আসা রাজিয়ার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সরকার লিটু।

রাজিয়ার পর আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট মালিক সমিতির অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন জব্দ তালিকার সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন।

তাদের সাক্ষ্য নেওয়ার পর বিচারক আগামী ১০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ঠিক করেন।

এই মামলার আসামিরা হলেন- সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে স্বাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের।

এদের মধ্যে পলাতক দুই আসামি জিয়া ও আকরামের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী জাকির হোসেন রোববার আদালতে উপস্থিত থাকলেও তিনি জেরা করেননি।

তার কাছে বিচারক জেরা করবেন কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি আসামির নামই বলতে পারেননি। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকিরের কাছ থেকে নথি দেখে তিনি দুই আসামির নাম বলেন।

কাঠগড়ায় থাকা আসামিদের মধ্যে শেখ আব্দুল্লাহ ও সবুরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। বিচারক তাদের লিগ্যাল এইড থেকে আইনজীবী নিতে বললেও তারা অস্বীকৃতি জানান। নিজেই জেরা করবেন বলে তাদের একজন চিৎকার করে বলেন। তবে তিনিও বাদীকে কোনো জেরা করেননি।