ধর্মঘটেও লঞ্চ ছাড়ছে ঢাকা সদরঘাটে

নিয়োগপত্র ও খাবার ভাতা দেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘটের ঘোষণার মধ্যেও লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকা সদরঘাট থেকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2019, 04:45 AM
Updated : 30 Nov 2019, 04:45 AM

বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ুন কবির জানান, শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মোট ১১টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে তিনটি বাদে সবই ছেড়ে গেছে।

“যাত্রী স্বল্পতার কারণে ভোরে চাঁদপুরের লঞ্চ সোনারতরী ছেড়ে যায়নি। একটি লঞ্চে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল, আরেকটি লঞ্চ সদরঘাটে নোঙ্গরই করেনি। ছুটির দিনে যাত্রীর চাপ যেরকম থাকে, সেরকমই আছে।”

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম শুক্রবার মধ্যরাতে ধর্মঘট শুরুর ঘোষণা দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, রাত সাড়ে ১২টায় সদরঘাট থেকে এমভি রাসেল-৩ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার পর সারা দেশে কোনো নৌযান চলাচল করবে না। শনিবার রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

“আমরা দীর্ঘদিন ধরে ১১ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছি। লঞ্চ মালিকপক্ষ শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি। গত বুধবারও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বসেছিলাম, কিন্তু আবারও আশ্বাস। তাই শ্রমিকরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়ায় আমরা ধর্মঘট শুরু করছি।”

অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সদস্য হাম জালাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নৌযান শ্রমিকদের মূল দাবিগুলো মেনে নিয়ে লঞ্চ মালিকপক্ষ ২০১৬ সালে নৌযান শ্রমিকদের সঙ্গে পাঁচ বছরের একটি চুক্তি করেছিল। সে চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হবে। তাই তাদের ধর্মঘটে যাওয়া ‘অযৌক্তিক’।

“মাস্টার ড্রাইভার আর সুকানিরা আসায় আমরা সকালে লঞ্চ ছাড়তে পেরেছি। বিকালে কী হবে জানি না। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি তারা এভাবে ধর্মঘট করতে পারে না।”

তবে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম দাবি করেন, মাস্টার ড্রাইভার আর সুকানিরা ধর্মঘটে থাকায় মালিকপক্ষ অন্য কর্মচারীদের দিয়ে ‘জোর করে’ লঞ্চ চালাচ্ছে।

“আমরা ধর্মঘটে আছি। আমরা তো জোর করে থামিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু মালিকরা জোর করে লঞ্চ চালাচ্ছে।”

লঞ্চ আসলে কারা চালাচ্ছে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, “অন্যদিন যে মাস্টার ড্রাইভাররা লঞ্চ ছাড়ার অনুমতি নেয়, আজ তারাই অনুমতি নিয়েছে। যথাযথ লোক থাকলে তবেই আমরা লঞ্চ ছাড়ার অনুমতি দিই।”

শ্রমিক ফেডারেশনের দাবিগুলো হলো ১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ করা ২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন দেওয়া ৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্য ভাতা দেওয়া ৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ ৫. এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ ৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ ৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়া ৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন ৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও সনদ নবায়ন, বেআইনি নৌ চলাচল বন্ধ করা ১০. নৌপরিবহন অধিদপ্তরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করা এবং ১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।