বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়া সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া সেই হামলা মামলার রায়ের আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, রোজার ঈদের কয়েক দিন আগের সেই ঘটনাকে প্রথমে ছিনতাই ভাবলেও ’গোলাগুলির’ ঘটনা তাদের চোখ খুলে দেয়।
”প্রথমে ভেবেছিলাম ছিনতাইয়ের ঘটনা হবে। কিন্তু পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা এবং বিদেশিদের অবস্থান সব মিলিয়ে বুঝতে পারি ঘটনাটা জঙ্গি হামলা। প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল এটা বুঝে উঠতে।”
বুধবার দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। তার আগে এক সাক্ষাৎকারে হামলার দিনের ঘটনাক্রমের সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন আছাদুজ্জামান মিয়া।
যা ঘটেছিল সেদিন
হামলার দিন ইফতার সেরে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোশতাক আহমেদের কাছ থেকে ঘটনার খবর পান তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার।
”ফোনে শুধু বলল, হলি আর্টিজানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। বিস্তারিত কিছুই জানি না। আমিও তখন সাথে সাথে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে। গিয়ে দেখি প্রায় একশ’ জনের মতো ফোর্স সেখানে রয়েছে,” বলেন আছাদুজ্জামান মিয়া।
”ওখানে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, আমাদের সাব ইন্সপেক্টর ফারুক। সন্ত্রাসীদের ব্যাপক গোলাগুলির প্রেক্ষিতে আমাদের পক্ষ থেকেও পাল্টা গুলি ছোড়া হয়। এক পর্যায়ে হলি আর্টিজানের খোলা মাঠ থেকে সন্ত্রাসীরা ভেতরে চলে যায়।”
একজন ভিকটিমের সাবেক সেনাসদস্য দেহরক্ষীর কাছ থেকেও ঘটনার একটি বিবরণ শোনার কথা জানান আছাদুজ্জামান মিয়া।
”ফোনে তিনি জানিয়েছেন, ‘বাইরে ড্রেনের পাশে দুজন বিদেশিসহ আমরা বেশ কয়েকজন আটকা পড়ে আছি, আমাদের বাঁচান’। আমাকে ডিসি গুলশান এই কথা জানানোর সাথে সাথেই কাউন্টার ফায়ারের সিদ্ধান্ত নেই।”
”এরপর গুলি করতে করতে ভেতরে ঢুকে যাই আমরা। ঘটনাস্থল থেকে নয়জনকে জীবিত উদ্ধার করে বের করে আনি।”
এরপর হলি আর্টিজানের গেইট পেরিয়ে ৮৪ নম্বর সড়কের মাথায় চলে আসার পর সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় বলে জানান আছাদুজ্জামান মিয়া।
আঘাতের পর পাল্টা প্রতিরোধে
জঙ্গিদের আক্রমণের মুখে পড়ার পর টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিস্থিতি জানানোর কথা উল্লেখ করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।
”তিনি আমাকে ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরে যেতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, কোনো পুলিশ সদস্য এবং ভেতরে আটকে থাকা একজনেরও যেন মৃত্যু না হয় সেভাবে ব্যাবস্থা নিতে।”
গুলশানের ৮৪ নম্বর সড়কের মাথায় অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম খুলে অভিযান পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “সারা রাত আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পর সেহেরির সময় সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবিসহ সব বাহিনীর প্রধান গণভবনে চলে যাই। আলোচনা শেষে সেনাবাহিনীকে অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী।
“ভোরের আলো ফোটার আগেই যেন অপারেশন থান্ডারবোল্ট হয়, সেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল,” বলেন তিনি।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার আগাম গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে এক প্রশ্নে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার তথ্য ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এ রকম একটা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে এ রকম ভয়াবহ জঘন্য হামলা হতে পারে- এ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা আমাদের কাছে ছিল না।”
হলি আর্টিজানে হামলার পর ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে ছয় মাসের মধ্যে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় বলে দাবি করেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার।
জঙ্গিবাদ নির্মূল সময়সাপেক্ষ হলেও সময়ের ধারাবাহিকতায় সেটি বিলীন হয়ে যাবে বলেই মনে করেন জাতীয় নিরাপত্তা সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, “এটা আসলে দুই-এক বছরে সম্ভব না। ভ্রান্ত আদর্শ পুরোপুরি মুছে দিতে সবচেয়ে বেশি জরুরি সামাজিক সচেতনতা। সেই সচেতনতা তৈরির কাজ চলছে। অব্যাহত রয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতাও।”