গুলশান হামলা মামলার রায় সামনে রেখে শনিবার এই কথাগুলো বলছিলেন ওই হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিমের স্ত্রী উম্মে সালমা।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা ঢোকার পর সেখানে অভিযানে গিয়ে হামলায় নিহত হন সে সময় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল।
তখন তাদের ছেলে সাজিদুল করিম সানির বয়স ছিল পাঁচ বছর। স্ত্রী উম্মে সালমা ছিলেন সন্তাসম্ভবা। এখন সেই সন্তান কামরুন্নাহার রায়নার বয়স তিন বছর। এই দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এখন রবিউলের স্ত্রীর জগত।
স্বামী নিহত হওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে চাকরি পান সালমা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাছে হওয়ায় অধিকাংশ সময় ঢাকার ধামরাই উপজেলার দেপাশাই গ্রামের বাবা মো. শাজাহানের বাড়িতে থাকেন তিনি। মাঝেমাঝে স্বামীর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামে যান। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সেখানেও থাকেন সালমা।
সালমা জানান, ২০০৯ সালে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন তিনি। ২০০৮ সালে পারিবারিকভাবে রবিউলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দেড় বছর পর তার কোলজুড়ে আসে ছেলে সাজিদুল করিম সানি। এরপরের সন্তান আর দেখে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তার।
“অনাগত সন্তানকে দেখেও যেতে পারেননি রবিউল,”বলেন সালমা।
স্বামী সম্পর্কে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করা রবিউল ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। লেখাপড়ায়ও ছিলেন মেধাবী। প্রতিবন্ধী শিশুদের ভালোবাসতেন তিনি। সমাজে অবহেলিত শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নিজের বাড়ির কাছেই বাসাই গ্রামে রবিউল প্রতিষ্ঠা করেন ব্লুমস নামে বিশেষায়িত স্কুল। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৪৩ জন প্রতিবন্ধ্বী শিশু লেখাপড়া করছে।
তিনি বলেন, “রবিউল ছিলেন ধৈর্যশীল। পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি পরিবারকে সময় দিতেন। আমার প্রতি দায়িত্ব পালনে কমতি ছিল না তার।”
স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করবেন জানিয়ে সালমা বলেন, প্রতিবন্দ্বী শিশুদের জন্য বন্ধুদের সহযোগিতায় মায়ের দেওয়া জমির ওপর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবিউল। দিন দিন এর শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। তবে সে অনুযায়ী অবকাঠামো ও আর্থিক সঙ্গতি বাড়েনি।
“দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী রবিউলের স্বপ্ন ছিল এই স্কুলটিকে নিয়ে। এখন নানা সীমাবদ্ধতার কারণে স্কুলটি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্কুলটির পরিসর ও সক্ষমতা আরও বাড়ানো সম্ভব।”