এই মামলায় আদালতে দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ওই হামলার আগে ঢাকার লেডিস ক্লাবসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজরদারি চালান জঙ্গিরা। বিদেশিদের আনাগোনা বেশি থাকায় হামলার জন্য হলি আর্টিজান বেকারিকেই বেছে নেওয়া হয়।
ঢাকার নামি স্কুল থেকে লেখাপড়া করা তিন তরুণসহ যে পাঁচজন এই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন, তারা হামলার উদ্দেশে যাত্রা করার আগে পরস্পরের থেকে বিদায় নেন ‘জান্নাতে দেখা হবে’ বলে।
পাঁচ জঙ্গির মধ্যে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইমতিয়াজ ওরফে ইলবাবাকেই সংগঠন থেকে হামলার নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে রোহান ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় জিডিও করেছিল তার পরিবার।
হামলার আগের দিন বৈঠক শেষে জোহরের নামাজ পড়ে সারোয়ার জাহান সবার উদ্দেশে বলেন, “আগামীকাল তোমরা হলি আর্টিজানে অপারেশন করবে, সেখানে বিদেশিদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি।”
“আমরা যদি হোটেল হলি আর্টিজানের গেইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি তাহলে আমরা সফল। কারণ বিশ্ব জেনে যাবে যে, বাংলাদেশেও হামলা হয়েছে। আমাদের হারানোর কিছুই নেই, আমরা বিজয়ী।”
এই বক্তব্য দিয়ে সারোয়ার জাহান তার আশুলিয়ার বাসায় চলে যান। পরে ওই বছরের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ার এই বাসায় র্যাবের অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে পড়ে আহত হন সারোয়ার জাহান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। আব্দুর রহমান নাম নিয়ে ওই বাসায় স্ত্রী-সন্তানসহ থাকা সারোয়ার জাহানই নব্য জেএমবির আমির বলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন র্যাব প্রধান।
পরে বাশারুজ্জামান চকলেট রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম ও মীর সামেহ্ মোবাশ্বেরের ব্যাগে তিনটি একে-২২ রাইফেল, তিনটি পিস্তল, তিনটি বড় চাকু, তিনটি গ্রেনেড, পর্যাপ্ত পরিমাণ গুলি ও বিস্ফোরক এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জল ও খায়রুল ইসলাম পায়েলের ব্যাগে পিস্তল, চাকু ও বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেন।
বাশারুজ্জামান চকলেট ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের এক বাড়িতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। সারোয়ার জাহানের বাড়িও এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার থুমরিভুজা গ্রামে।
“রাত ৮টা ৪২ মিনিটে পাঁচজন হলি আর্টিজান বেকারির প্রধান ফটকে গেলে নিরাপত্তারক্ষী নূর ইসলাম তাদের পরিচয় জানতে চান। এ সময় কেউ কোনো কথা না বলে শুধু নিবরাস নিরাপত্তারক্ষীর মুখে ঘুষি মেরে অন্যদের নিয়ে বেকারির ভেতরে ঢুকে যায়। পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগেই তারা গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুরো বেকারি দখলে নিয়ে নেয় এবং ৩০ মিনিটের মধ্যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়।”
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং শাখার সাবেক কর্মকর্তা তানভীর কাদেরী এই জঙ্গিদের বসুন্ধরার ওই বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের আজিমপুরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে নিহত তানভীর তার ২০০৯ মডেলের সিলভার কালারের একটি এক্সিও প্রাইভেটকার সাড়ে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে হলি আটিজান হামলার খরচ যুগিয়েছিলেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
“এই হামলার আগে লেডিস ক্লাব, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা পার্ক, বনানী কফি শপসহ বিভিন্ন জায়গায় রেকি করা হয়। পরে বিদেশিদের অবস্থান বেশি হওয়ায় হলি আটিজান বেকারিকে বেছে নেওয়া হয়।”
দুই কর্মচারী দুর্ঘটনার শিকার
হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর কমান্ডো অভিযানে মোট ছয় জঙ্গি নিহত এবং এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তাৎক্ষণিকভাবে বলা হয়েছিল।
“এই দুইজনের জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা দুর্ঘটনার শিকার মাত্র।”
সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান শেষে ১৩ জনকে হলি আর্টিজান বেকারি থেকে উদ্ধার করে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া হামলার পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ২৭ জন বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৯ জন সদস্যসহ আহত হন ৩১ জন।