নজিরবিহীন এই জঙ্গি হামলা মামলার রায় সামনে রেখে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, “আমরা চাই ওই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সবার শাস্তি হোক। দোয়া করবেন, আর কারও ছেলের যেন এই রকম বিপদ না আসে।”
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে যখন জঙ্গি হামলা হয়, তখন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে ছিলেন হাসনাত করিম।
ঢাকার বনানীর ব্যবসায়ী প্রকৌশলী রেজাউল করিমের ছেলে হাসনাত নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষক। ১৩ বছর বয়সী মেয়ের জন্মদিন উদযাপনের জন্য সেদিন তিনি হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন বলে জানিয়ে আসছে তার পরিবার।
ওই ক্যাফেতে জঙ্গিরা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে; তাদের ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ যায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার। পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারীরা মারা পড়ে; ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত করিমের পরিবারসহ কয়েকজন জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান।
কিন্তু ওই রেস্তোরাঁয় জিম্মি দশার একটি ভিডিও প্রকাশিত হলে হাসনাতকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। হামলার পরদিন ভোরে ধারণ করা ওই ভিডিওতে হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা যায়।
তবে হাসনাতের স্ত্রী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, জিম্মি অবস্থায় জঙ্গিদের নির্দেশ মেনে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তার স্বামী।
এরপর ওই বছরের ৪ অগাস্ট গ্রেপ্তার হন হাসনাত করিম। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা ওই মামলায় তাকে দুই দফায় ১৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
হাসনাত করিম অনেকবার জামিনের আবেদন করলেও প্রতিবারই তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলে আসছিলেন, অভিযোগপত্রে হাসনাত করিমের নাম আসতে পারে।
কিন্তু দুই বছর তদন্ত শেষে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযোগপত্র দাখিল করে জানায়, হামলায় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক এই শিক্ষকের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, “হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের সাথে চলাফেরা করতে দেখা গেলেও তিনি পরিস্থিতির শিকার এবং জঙ্গিরা তাকে জিম্মি করেছিল বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। তার ব্যাংক হিসাবসহ অন্যান্য বিষয়েও খোঁজ নিয়েও জঙ্গিদের সাথে সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, “এই ঘটনায় জীবিত উদ্ধারদের মধ্যে কেউই হাসনাত করিমের নাম বলেনি। তদন্তে হামলার কোনো পার্টেই তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ যাওয়ার পর আদালতে বিচার শুরুর আগে গত বছরের ৯ অগাস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান হাসনাত করিম।
তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর মারা যান তার ব্যবসায়ী বাবা রেজাউল করিম। সে সময় হাসনাতের পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা মঞ্জুর করেনি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, হাসনাতের বাবা রেজাউল করিম বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। নর্থ সাউথের চাকরি ছেড়ে ওই প্রতিষ্ঠানে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন হাসনাত।
মুক্ত হওয়ার পর এখন হাসনাত করিম বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছেন বলে জানিয়েছেন তার মা হোসনে আরা করিম।
তিনি বলেন, “মুক্তি পাওয়ার পর ট্রমার মধ্যে থাকলেও এখন সে সুস্থ আছে। মোটামুটি নরমাল।”
রায় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি হাসনাতের স্ত্রী শারমিন পারভীন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনায় তিনিও একজন প্রত্যক্ষদর্শী। আদালতে তিনি এ মামলায় সাক্ষ্যও দিয়েছেন।