কবি, স্থপতি রবিউল হুসাইন আর নেই

একুশে পদকজয়ী কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2019, 03:42 AM
Updated : 26 Nov 2019, 06:25 AM

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রবিউল হুসাইনের মৃত্যু হয়।

৭৬ বছর রবিউল হুসাইনের রক্তের জটিলতায় ভুগছিলেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। 

ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পাওয়া রবিউল হুসাইন কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের জন্যও।

তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের ট্রাস্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য।

ঝিনাইদহের শৈলকূপার সন্তান রবিউল হুসাইনের জন্ম ১৯৪৩ সালে। কুষ্টিয়ায় মেট্রিক আর ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে তিনি ভর্তি হন ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির (বর্তমান বুয়েট) আর্কিটেকচার ফ্যাকাল্টিতে।

ষাটের দশকে ছাত্র থাকাকালেই তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস মিলিয়ে দুই ডজনের বেশি বই রয়েছে তার।

স্থপতি রবিউলের ঝোঁক ছিল ইটের কাজের দিকে। তার নকশায় বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) ভবনটি ছিল তার প্রিয় একটি কাজ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তি ও স্বাধীনতা তোরণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট, ভাসানি হল, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, খালেদা জিয়া হল, ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম ও একাডেমিক ভবন কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে রবিউল হুসাইনের নকশায়।

বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য রবিউল শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কচি কাচার মেলা, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটেও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। 

একুশে পদক ছাড়াও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও সার্চ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই কবি। 

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে রবিউল হুসাইনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার ধানমণ্ডির বাসায়। রাতে আবার কফিন রাখা হবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের হিমঘরে।

বুধবার সকাল ১০টায় এ কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বাংলা একাডেমিতে। সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে সর্বস্তরের নাগরিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে তার কফিন নেওয়া হবে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে রবিউল হুসাইনকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান সারওয়ার আলী।