চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনসহ ৭ জনের নামে দুর্নীতি মামলা

বাড়তি দামে যন্ত্রপাতি কিনে নয় কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2019, 08:52 AM
Updated : 25 Nov 2019, 03:50 PM

দুদকের চট্টগ্রাম এক নম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক সোমবার এ মামলা দায়ের করেন বলে কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান।  

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এমআরআইয়ের যন্ত্রের বাজারমূল্য দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা হলেও সেটা কিনতে তারা ব্যয় দেখিয়েছেন নয় কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চারটি কালার ডপলারের বাজারমূল্য এক কোটি আট লাখ ৮০ হাজার টাকা হলেও ব্যয় দেখানো হয়েছে দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এছাড়া হাসপাতালের জন্য আটটি পেশেন্ট মনিটরের বাজার মূল্য ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭২০ টাকা হলেও দেখানো হয়েছে এক কোটি পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ১২ চ্যানেলের একটি ইসিজি মেশিনের দাম দুই লাখ তিন হাজার টাকা হলেও দেখানো হয়েছে তিন লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। চার লাখ পাঁচ হাজার ৩৬০ টাকা বাজারমূল্যের একটি ব্লাড ওয়ার্মারের দাম নয় লাখ ৩২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

ছয় লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ টাকার পাঁচটি ইনপুশন পাম্পের মূল্য নয় লাখ টাকা, ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকার আটটি সিরিঞ্জ পাম্পের মূল্য ২৯ লাখ আট হাজার টাকা, পাঁচ লাখ সাত হাজার টাকার পাঁচটি পাল্স অক্সিমিটারের মূল্য সাত লাখ ৭০ হাজার টাকা, ছয় হাজার ৪০০ টাকার দুটি অটোস্কোপের বাজারমূল্য সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে একটি ওটি টেবিলের মূল্য চার লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা হলেও দেখানো হয়েছে আট লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ৪১ লাখ নয় হাজার ৩০৪ লাখ টাকা বাজারমূল্যের ভেনটিলেরসহ দুইটি অ্যানেসথেসিয়া মেশিনের দাম এক কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

তবে দুটি এয়ার কোলারের বাজার মূল্য দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা হলেও সেখানে ৩০ হাজার টাকা কম দেখানো হয়েছে।

প্রনব বলেন, ২০১৪ সালের ২৯ মে থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ওই দুর্নীতি হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট  চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী, হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. মো. আব্দুর রব, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক সার্জারি) ডা. মো. মইন উদ্দিন মজুমদার, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. বিজন কুমার নাথ।

অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার, মেসার্স আহম্মদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সী ফারুক হোসেন ও এএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফতাব আহমেদ।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দুদকের মুখপাত্র জানান।

২০১৪ সালের ২৯ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রয়োজনে ভারি যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়।

এরপর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য ঠিকাদার কোম্পানি মেসার্স এএসএলকে দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা, মেসার্স আহম্মদ এন্টারপ্রাইজকে দুই কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং মেসার্স বেঙ্গল সাইন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যালকে নয় কোটি ৯৫ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

২০১৫ সালে এসব যন্ত্রপাতি কেনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশি দাম দেখানো হয়েছে অভিযোগ পেয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে। এর প্রেক্ষিতে একাধিক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে যন্ত্রপাতির বাজার দর নিরুপণ করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, কাজ পাওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠান হাপাতালের সংশ্লিষ্ট আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বাজার দরের অধিক মূল্যে যন্ত্রপাতি কেনে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।