নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ‘কর্তৃত্ব’ নিয়ে এক বছরের মধ্যে ফের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
Published : 24 Nov 2019, 11:13 PM
সম্প্রতি শূন্য পদে কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ আগে কমিশনে নতুন করে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রোববার চার নির্বাচন কমিশনার যৌথভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আনঅফিসিয়াল (ইউও) নোটিস দিয়েছেন।
এতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনের সব বিষয়ে সংবিধানসহ বিদ্যমান সব আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
এ বিষয়ে কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পারি না। সিদ্ধান্তগুলো আমাদের অবহিতও করা হয় না। এটা যাতে করা হয়, সে জন্য আমরা জানিয়েছি।”
ইসি সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু হয়েছে।”
ইউও নোটের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশনে গত সেপ্টেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এমন বিরোধ দেখা দিয়েছিল। সিইসি ও ইসি সচিব ছাড়া অন্য নির্বাচন কমিশনারদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না জানানোর অভিযোগ তখনও উঠেছিল।
আইন-বিধি যথাযথ অনুসরণ করা হচ্ছে না দাবি করে তখনও সিইসিকে চিঠি দিয়েছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার।
পরে ইসি সচিবালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালনায় আইন ও বিধিমালা অনুসরণে চার নির্বাচন কমিশনারকে জানানোর বিষয়ে অফিস আদেশ হলে ‘অসন্তোষ’ প্রশমিত হয়।
সিইসি ও সচিবের কর্তৃত্ব
ইউও নোটে বলা হয়, ১২তম-২০ তম গ্রেডভুক্ত শূন্য পদে কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে সিইসির সভাপতিত্বে ১৪ নভেম্বর একটি সভা হয়। সভায় এক পর্যায়ে একজন নির্বাচন কমিশনারের প্রশ্নের উত্তরে ইসি সচিব মো. আলমগীর জানান, নিয়োগের বিষয় ও এ সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সমর্থন করেন।
সচিব আরও জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়াদি কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য বিষয়াদি সিইসির অনুমোদন সাপেক্ষে সচিবালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।
ইসির সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নের শঙ্কা
সচিবালয়ের এমন কর্তৃত্বের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন চার নির্বাচন কমিশনার।
তারা মনে করেন-
>> সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপর ইসির সার্বিক নিয়ন্ত্রণ অনুপস্থিত। তারা শুধু সচিব ও সিইসির নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। কমিশনের নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ থাকছে না।
>> মাঝে মধ্যে নির্বাচন প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কোনো কোনো বিষয় উপস্থাপন করা হলেও অন্য কোন আর্থিক বিষয়ে কমিশনকে অবগতও করা হয় না, যাহা নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৬ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
>> সচিবালয় এককভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা গত ১৪ নভেম্বরের কমিশন সভায় সিনিয়র সচিব তুলেও ধরেছেন। যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
>> নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনের সব বিষয়ে সংবিধানসহ বিদ্যমান সব আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হবে। একইসংগে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
কর্তৃত্ব নিয়ে ১০ বছরে ৪ বার বিরোধ
২০০৯ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন হওয়ার পর তখনকার এ টি এম শামসুল হুদার কমিশনের দুই নির্বাচন কমিশনার আইন সংশোধনের দাবিতে সরব হয়েছিলেন।
এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসি সচিবালয়ের ওপর ‘সিইসির নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেন তখনকার সিইসি শামসুল হুদা।
তার যুক্তি ছিল, ইসির কাজের বিষয়ে ৯০ শতাংশ সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের সভায়। বাকি ১০ শতাংশ প্রশাসনিক কাজ সিইসির নিয়ন্ত্রণে সচিবের তত্ত্বাবধানে হয়। প্রশাসন পরিচালনা ও সমন্বয়ের স্বার্থে ইসি সচিবালয়ে একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত কমিশনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ‘সম্ভব নয় কিংবা প্রয়োজনীয় নয়’।
এরপর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসিতেও ক্ষমতার বিরোধ দেখা দিয়েছিল। কমিশনারদের মধ্যে কার পরে কে ফাইলে সই করবেন, সেই ক্রম নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার দেড় বছরের মাথায় ২০১৮ সালে ফিরে আসে একক কর্তৃত্বের বিতর্ক। এরই এক বছরের মধ্যে ফের অসন্তোষ কমিশনে।