রিমান্ডের আগে ফের অসুস্থ সম্রাট

দুদকের মামলায় রিমান্ড শুরুর আগে ‘বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট’ নিয়ে ফের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

নিজস্ব প্রতিবেদকগাজীপুর প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2019, 09:32 AM
Updated : 24 Nov 2019, 09:32 AM

ফলে তাকে দুদক হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের পরিকল্পনা পিছিয়ে গেছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান।

দুদকের আবেদনে গত ১৭ নভেম্বর সম্রাটকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় ঢাকার জজ আদালত। সেই অনুমতির ভিত্তিতে রোববার থেকে হেফাজতে নেওয়ার কথা ছিল দুদকের।

কিন্তু গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে থাকা সম্রাট শনিবার বিকালে অসুস্থ বোধ করলে তাকে প্রথমে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, “বুকে ব্যথা অনুভব করার কথা বললে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে রাতেই তাকে পরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, “তিনি (সম্রাট) বুকে ব্যথা আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতে বলা হয়েছে।”

আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা.  নাজমুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কার্ডিয়াক সমস্যা নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছেন। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।”

ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

এরপর ৭ অগাস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। 

কারাগারে নেওয়ার দুদিন পর বুকে ব্যথা অনুভব করলে সম্রাটকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে চারদিন চিকিৎসা দিয়ে ১২ অক্টোবর আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয় সম্রাটকে।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আফজালুর রহমান সে সময় জানিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সালে সম্রাটের হৃদপিণ্ডের একটি ভাল্ব ‘রিপ্লেস’ করা হয়েছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নতুন কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।

রমনা থানার অস্ত্র মামলায় গত ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক।

ক্যাসিনো চালানোর পাশাপাশি ‘চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মত অপকর্মের’ মাধ্যমে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা সমমূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়। পরে দুদকের আবেদনে আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।