হাজারো স্বপ্নময় চোখে অবিন্তাকে খোঁজেন মা রুবা

দেশের জন্য হাজারো স্বপ্ন বোনা এক জোড়া চোখ ভয়াল এক বিপর্যয়ে থমকে গেছে বছর তিনেক আগে, তবে থমকে যায়নি তার স্বপ্নযাত্রা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2019, 07:34 PM
Updated : 25 Nov 2019, 04:31 PM

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তরুণী অবিন্তা কবির, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন তার মা রুবা আহমেদ।

২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৯ বছর বয়সী অবিন্তা কবির।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি অক্সফোর্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অবিন্তা সেবার ঈদে স্বজনদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন ঢাকায়।

অবিন্তা নিহত হওয়ার পরের বছরই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য রাজধানীর ভাটারা থানার মাদানী এভিনিউতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তার স্বজনরা। ৩২ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিয়ে শুরু হওয়া সেই স্কুলে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০ ছুঁইছুঁই।

ওই বছরই যাত্রা শুরু অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন, যারা কাজ করছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের শিক্ষা আর সামাজিক অধিকার নিয়ে।

 

এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় এথেনা গ্যালারিকে অবিন্তার মৃত্যুর পর নতুনভাবে সাজানো হয়, পরের বছর অবিন্তা গ্যালারি হিসেবে সেটির যাত্রা শুরু হয়।

শনিবার সেই গ্যালারিতে অবিন্তা স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী।

সে প্রদর্শনীতে অবিন্তার মা রুবা আহমেদ বলেন, “অবিন্তা নিজেও একজন খুদে শিল্পী ছিল। আমরা তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতেই এ ফাউন্ডেশন গঠন করেছি। সবার সহযোগিতায় এর মধ্য দিয়েই আমরা দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাব।”

তিনি বলেন, “অবিন্তা দেশকে ভালোবাসত, দেশের মানুষের দুঃখ-বেদনায় সে আহত হত। দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নের নানা পরিকল্পনার কথাও সে বলত। আমি চাই, বাংলাদেশের প্রতিটা স্বপ্নময় চোখে আমার অবিন্তাকে খুঁজে পেতে।”

এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অবিন্তার নানী নীলু রওশন মুর্শেদ। অবিন্তার মা ও নানী কেউই গুলশান হামলা মামলার রায় নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নীলু রওশন বলেন, “আমাদের অবিন্তার মতো যেন আর কেউ নির্মমভাবে প্রাণ না হারায়।”

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ২০১৭ সালের মে মাসে চালু করেছে ‘অবিন্তা সাইবার সেন্টার অ্যান্ড আর্কাইভ’।

অবিন্তার নামে বৃত্তি চালু করা হয়েছে ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজেও। এর আওতায় অক্সফোর্ড কলেজের টিউশন ফি, বাসস্থানসহ আনুসঙ্গিক খরচ বহন করবে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। এই বৃত্তিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীরাই অগ্রাধিকার পাবেন। যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে তখন সুযোগ দেওয়া হবে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের শিক্ষার্থীকে।

অবিন্তা ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যেই শুরু করেছে ‘অবিন্তা ইয়াং চেঞ্জ লিডার’ নামে একটি কর্মসূচি।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান ইশরাতের মামা

গুলশান হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ওই হামলায় নিহত ইশরাত আখন্দের মামা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক চঞ্চল খান।

তিনি বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের যে চেতনা তার উপর বিশাল আঘাত ছিল হলি আর্টিজানের ঘটনা। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে এটি ছিল এক বড় বিপর্যয়।”

নজিরবিহীন এই জঙ্গি হামলা মামলার রায় হবে আগামী ২৭ নভেম্বর।

এ বিষয়ে নিজের প্রত্যাশা জানিয়ে চঞ্চল খান বলেন, “এ রায় হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। এ বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ যেন আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।”

কর্মজীবনে ব্র্যাকনেট, বিজিএমইএ, গ্রামীণফোনে কাজ করে আসা ইশরাত আখন্দের মন পড়ে থাকত শিল্পকলায়। ২০১৫ সালে গুলশানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ক্রিয়েটিভ আর্টস গ্যালারি।

শিল্পকলা প্রদর্শনীর চিরায়ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে ইশরাত নতুন ধারার একটি গ্যালারি করতে চেয়েছিলেন বলে জানান চঞ্চল খান।

তবে ইশরাতের মৃত্যুর পর থমকে গেছে সে গ্যালারি। 

ইশরাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চঞ্চল খান বলেন, “ইশরাত সমাজ পরিবর্তনের কথা বলত। সে বলত, তরুণদের মধ্যে সৃজনশীলতা আর উদ্ভাবনী চিন্তা ঢুকিয়ে দিতে পারলে সমাজের উপকার হবে। রাষ্ট্রের চিন্তা-চেতনায় নতুন জগতের উন্মোচনের কথা সে বলত।”