ভারত-বাংলাদেশের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে ক্রিকেট: প্রধানমন্ত্রী

ক্রিকেট বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের বন্ধনকে আরও গভীর করেছে মন্তব্য করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে সব সময় ভারতকে পাশে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2019, 08:32 PM
Updated : 22 Nov 2019, 08:32 PM

বর্তমানে ভারতের মতো বাংলাদেশেও ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা জানিয়ে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য আমরা বিভিন্নমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি। আমি আশা করছি, আমাদের এই অভিযাত্রায় ভারত অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থাকবে।”

কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে গোলাপি বলে ভারত-বাংলাদেশের প্রথম দিবা-রাত্রির ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনের খেলা শেষে শুক্রবার রাতে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এসব বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বিগত এক দশকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছে। ক্রিকেট আমাদের উভয় দেশের জনগণের মধ্যকার বন্ধনকে আরও নিবিড় করেছে।”

ভারত-বাংলাদেশের এই সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত ও নিবিড়তর হবে বলে আশাবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ বহুবিধ অভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা একসঙ্গে রক্ত ঝরিয়েছি।”

শেখ হাসিনা এ সময় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য শান্তি নিকেতনে বাংলাদেশ সরকার নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’কে বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক বন্ধনের এক ‘মাইলফলক’ অভিহিত করেন।

গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই ভবন উদ্বোধনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জনণের ভাষা ও খাদ্যাভ্যাস এক। আবার আমরা একই কবির লেখা কবিতা পড়ে, গান গেয়ে বড় হয়েছি। আমাদের আবেগ, অনুভূতি, আনন্দ-বেদনার প্রকাশ একই।”

তিনি বলেন, “আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের প্রভাব অপরিসীম।”

স্বাধীনতার পর কলকাতায় প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণের উদ্বৃতি তুলে ধরে তাকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূল ভিত্তি বলে অভিহিত করেন শেখ হাসিনা।

“জাতির পিতা বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আমাদের হৃদয়ের। এই বন্ধুত্বের বন্ধন সব সময় দৃঢ় এবং চিরস্থায়ী থাকবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত পথই বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মূল ভিত্তি। সময়ের বিবর্তনে আমাদের এ সম্পর্ক বিশ্ববাসীর নিকট সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের এক আদর্শ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।”

মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এবং সেদেশের জনগণের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আজ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার এবং তার জনগণের অপরিসীম অবদানের কথা। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের জনগণ সেই ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ দিনগুলোতে যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তা কখনই ভুলবার নয়।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ এক ন্যায়হীন সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে সময় ভারত সরকার এবং জনগণের সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিশেষ করে কলকাতা থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হত।”

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০০০ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণকারী দুই দেশের খেলোয়াড়, যাদের অনেকেই মাঠে উপস্থিত ছিলেন, তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে ২০০০ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচের কথা, যে ম্যাচে প্রতিপক্ষ দল ভারতের অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নবীন সদস্য হলেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয় করেছে।”

এছাড়া বাংলাদেশের আইসিসি বিশ্বকাপ ম্যাচসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজন এবং ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতাগুলো অত্যন্ত সফলভাবে নিয়মিত আয়োজনেরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান দিবা-রাত্রির টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।”

প্রধানমন্ত্রী ভারত-বাংলাদেশ ঐতিহাসিক দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ দেখতে আমন্ত্রণ জানানোয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, “আমাকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী এবং ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সিটি অব জয় হিসেবে পরিচিত কলকাতা আমাদের অত্যন্ত কাছের। অনেক আবেগ এবং স্মৃতি বিজড়িত পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারা আমার জন্য সব সময়ই অত্যন্ত আনন্দের।”

বঙ্গবন্ধুর কলকাতার শিক্ষা জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ছাত্র জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই নগরীতেই অতিবাহিত করেছেন।”

১৯৪৫-৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র থাকাকালে বঙ্গবন্ধু এখানকার বেকার হোস্টেলে থাকতেন বলে জানান তিনি।