শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, দলনেতা এম এম মুহিত মাঝপথে চোখে আঘাত পাওয়ায় তার হাতেই তুলে দিয়েছিলেন পতাকা আর অভিযান শেষ করার দায়িত্ব। তখন মনে হচ্ছিল, পুরো বাংলাদেশটাই যেন হাতে তুলে দিলেন মুহিত।
বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) সদস্য ইকরামুল হাসান এর আগে ঘুরে এসেছেন হিমালয়ের কেয়াজো-রি চূড়া। আর এম এ মুহিত এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী।
হিমালয়ের ২৩ হাজার ৩৮০ ফুট উচ্চতায় হিমলুং পর্বতশিখরে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে গত ৫ অক্টোবর শুরু হয় এ দুই বাংলাদেশির অভিযান। নেপালে তাদের সঙ্গে যোগ দেন পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন ও সাউথ আফ্রিকার আরও আটজন।
কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে বিপদ সংকুল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গত ২৩ অক্টোবর ইকরামুল পৌঁছান হিমলুং চূড়ায়।
অভিযানের আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুই অভিযাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় পতাকা। হিমলুং জয় করে এসে শুক্রবার তারা পতাকা প্রত্যার্পণ করেন আয়োজকদের হাতে।
অভিযানের গল্প শোনাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হন হিমলুংজয়ী ইকরামুল। সাত হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বতে এটাই ছিল তার প্রথম অভিযান।
“মুহিত ভাই যখন চোখে আঘাত পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে রেখে আমি একা যাব- এটা ভাবতেও পারছিলাম না। তিনি যখন শেরপার কাছ থেকে পতাকা বের করে আমাকে দিলেন, তখন মনে হল বাংলাদেশটাই তিনি আমার হাতে দিয়েছেন। আমার কী হবে, আমি ঠিকভাবে ফিরে আসতে পারব কিনা- কিছুই তখন ভাবতে পারছিলাম না”।
অভিযানের শুরুতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ৫ অক্টোবর নেপালে পৌঁছান মুহিত আর ইকরামুল। ৮ অক্টোবর নেপালের কোটো থেকে ট্রেকিং শুরু করে ১২ অক্টোবর তারা পৌঁছান ১৫ হাজার ৯১২ ফুট উচ্চতায় বেইজ ক্যাম্পে।
এরপর ২০, ২১ ও ২২ অক্টোবর আরও তিনটি ক্যাম্প পেরিয়ে ২৩ অক্টোবর ভোর ৪টায় দুইজন শেরপাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় দুই অভিযাত্রীর চূড়ান্ত আরোহণ।
কয়েক ঘণ্টা পর উড়ন্ত তুষারকণায় চোখে আঘাত পান দলনেতা মুহিত। একজন শেরপাকে নিয়ে তিনি ৩ নম্বর ক্যাম্পে ফিরে যান। অভিযান শেষ করার দায়িত্ব নিয়ে ইকরামুল হাসান এগিয়ে যান আরেকজন শেরপার সঙ্গে।
সেই সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করে ইকরামুল বলেন, “যখন পর্বতের চূড়া দেখতে পাচ্ছিলাম, তখন খুব ভালো লাগছিলো, কিন্তু শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছিলাম না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর বাতাসের কারণে ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকাও অসম্ভব ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি মনে হয় আর ফিরে আসতে পারব না।
“চূড়ায় উঠে আমার চোখে পানি চলে এলো। আমার শেরপা আর আমি দুইজন দুইজকে জড়িয়ে ধরলাম। অনুভূতিটা আসলে প্রকাশ করার মত না।”
হিমলুং চূড়ায় তারা ছিলেন মিনিট সাতেক। সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে ফিরতি পথ ধরেন।
অভিযানের দলনেতা মুহিত বলেন, পর্বতারোহণের প্রতিটা মুহূর্তে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয়, তা একমাত্র পর্বতারোহীই জানে।
“পর্বত সামিট হচ্ছে এক ধরনের উপরি পাওনা। আমি মনে করি আমরা অভিযানগুলোর সময় হিমালয়ের যে রূপ দেখি, প্রকৃতি দেখতে পাই, এটাই অসাধারণ, যেটা সেখানে না গেলে বোঝানো সম্ভব না”।
হিমলুংজয়ী ইকরামুল হাসানকে নিয়েও প্রশংসা ঝরে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গজয়ী মুহিতের কণ্ঠে।
“আমার মতে, সে বাংলাদেশের সেরা পর্বতারোহী। সে এখন এভারেস্ট অভিযানের জন্যও তৈরি। তার সফলতার অংশীদার আমিও।”
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, নেপালের রাষ্ট্রদূত ধন বাহাদুর ওলী, আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অফ মার্কেটিং গালীব বিন মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে। সঞ্চালনায় ছিলেন অ্যান্টার্কটিকা ও সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হক।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “আমরা জানি বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পর্বতারোহীদের অনেকগুলো পর্বত অভিযান পরিচালনা করেছে। আমি মনে করি ভবিষ্যতেও তারা তাদের এই ধারা অব্যাহত রাখবে।”
বাংলা মাউন্টেইনারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের পরিচালনায় হিমলুং অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করে ইস্পাহানি টি লিমিটেড ও আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেড ও আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেড।