সার্কের স্বার্থেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দরকার: মুনতাসীর মামুন

রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান না হলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ‘অন্তর্ঘাতমূলক সংঘাত’ দেখা দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি এসেছে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2019, 10:56 AM
Updated : 22 Nov 2019, 10:56 AM

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর শুক্রবার বাংলা একাডেমিতে গণহত্যা বিষয়ক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে।  

জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান যদি না হয়, এ অঞ্চলে… সার্কভুক্ত দেশগুলোতে শিগগিরই বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমূলক সংঘাত তৈরি হবে। যে জঙ্গি, মৌলবাদি কাজ শুরু হবে, সেটা থেকে ভারত, বাংলাদেশ বাদ পড়বে না। সার্কের স্বার্থেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিপীড়নের অভিযোগে ইতোমধ্যে হেগের ‘দি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস’ এ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওআইসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়া।

সেই মামলার প্রসঙ্গ টেনে মুনতাসীর মামুন বলেন, “আজকে আমরা যদি ঘাতক-খুনিদের বিচার করতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাই, তবে আমার বিশ্বাস, আমরা (একাত্তরের ভূমিকার জন্য) পাকিস্তানিদেরও বিচার করতে পারব। পাকিস্তানিদের বিচার করতে পারলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এই কাজের সাহস পেত না।”

২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা যে ক্রমেই সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে, সে কথা সরকারের মন্ত্রীরাও বলছেন।

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও গত দুই বছরেও সেই প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায়।

মুনতাসীর মামুন বলেন, “আমরা ফেরত পাঠাতে পারছি না বৃহৎ শক্তিবর্গের জন্য। চীন ও ভারতের স্বার্থ আমাদের বাধা দিচ্ছে। সোজা কথা আমরা সোজাভাবে বলি। আজকে এর জন্য আমাদের দণ্ড দিতে হচ্ছে।“

জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার ইতিহাস জাতিকে ‘ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল’ বলেও মন্তব্য করেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি।

তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া যদি ক্ষমতায় না আসতেন, যদি নিজামীরা ক্ষমতায় না আসতেন, তাহলে আমরা তাদের (একাত্তরে শহীদ) কথা মনে রাখতে পারতাম। তারা (বিএনপি-জামায়াত) আমাদের এই ইতিহাসটি ভুলিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার তুলে ধরছি, যাতে নতুন প্রজন্ম মনে রাখে- এ রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পেছনে কত অশ্রু, কত বেদনা, কত কান্না জড়িয়ে আছে।”

সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফরে যায়। তারা ভিক্টরি মিউজিয়াম দেখতে গেলে সেই জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এল্ডার ইয়ানি বকেভ খুলনায় প্রতিষ্ঠিত ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সম্প্রসারণে কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দেন।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর পাঁচ বছর প্রকল্প হিসেবে থাকা এ জাদুঘরটি এখন স্থায়ী অবয়ব পেতে চলেছে। এ নিয়ে ‘কনস্ট্রাক্ট অব আর্কাইভ অ্যান্ড মিউজিয়াম-১৯৭১: জেনোসাইড-টর্চার’ শিরোনামে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পও রয়েছে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী আসরে বলেন, “এই জাদুঘরের বিস্তারে যত ধরণের সহযোগিতার প্রয়োজন আমরা করব।”

আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক হাশেম খানের স্বাগত বক্তব্যের পর গণহত্যা বিষয়ে বক্তব্য দেন ভারতের সাংবাদিক হিরন্ময় কর্মকার।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তার মূল প্রবন্ধে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মুসলিম বিশ্ব সেই সমর্থন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল।”

যুক্তরাজ্য, মিয়ানমার,কম্বোডিয়া,  ইতালি,ভারত ও বাংলাদেশের অর্ধ শতাধিক লেখক, গবেষক দুই দিনের এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।