ঢাকা থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে দেওয়া কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার একদিন পর রাজধানী থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2019, 10:24 AM
Updated : 22 Nov 2019, 10:27 AM

শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছেড়ে গেছে।

সকালে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়। যাত্রীদের ভিড়ও গতকালের চেয়ে বেশি।

গাবতলী থেকে খুলনাগামী ঈগল পরিবহনের বিভিন্ন পরিবহনের বাস নিয়মিত বিরতিতে ছেড়ে গেছে বলে জানান এ পরিবহন কোম্পানির গাবতলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক রুবেল।

তিনি বলেন, “গতকাল যে বাসগুলো এসেছে সেগুলো খুলনা, মাগুরা, যশোরসহ বিভিন্ন রুটে সময়মতো ছেড়ে গেছে। দুপুরের পরও গাড়ি ছাড়বে।”

সোহাগ পরিবহনের বাসগুলোও নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাচ্ছে বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে।

আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না থাকলেও গত সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন দেশের অনেক এলাকার বাস চালক ও শ্রমিকরা। এর মধ্যে বুধবার সকাল থেকে ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন।

বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলে ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু বৃহস্পতিবারও দেশের অনেক এলাকায় বাস শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘট চলতে থাকে। 

ফলে বৃহস্পতিবারও গাবতলী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, খুলনা থেকে কোনো বাস আসতে না পারায় ঢাকা থেকে সেগুলো ছাড়তে পারেনি।

বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাস চলাচল এখন স্বাভাবিক।

“আজ কোনো রুটে বাস চলাচলে কোনো সমস্যা নেই। হান্ড্রেট পার্সেন্ট বাস ছেড়ে যাচ্ছে। ঢাকার দিকেও ছেড়ে আসছে।”

সায়েদাবাদ থেকেও বিভিন্ন পরিবহনের বাস চলাচল করছে বলে জানান সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস শ্রমিক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুবা।

শুক্রবার গাবতলীতে জাতীয় সড়ক পরিবহন মোটর শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকরাও সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়ন চান। তবে এতে পরিবহন শ্রমিকদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি।

“সড়ক পরিবহন আইনের ১৪টি অধ্যায়ের ১২৫টি ধারার মধ্যে ৫২টি ধারাই শাস্তির বিধান সম্পর্কিত। কিন্তু চালকরা ছাড়াও পথচারী, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ বিভিন্ন পক্ষ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।”

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে। ‘চাঁদাবাজির সুযোগ রাখতেই’ এটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

“মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে তারা ২০০৩ সাল থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে। এসব নেতারা সরকারের ভেতরে থেকে পরিবহন ধর্মঘটের নামে বিশৃঙ্খলা করে অবৈধ চাঁদাবাজি বহাল রাখতে চায়। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে হলে দুর্নীতিবাজ এসব নেতাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বৈঠক

এদিকে সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুক্রবার সেগুনবাগিচায় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।

ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে দেশের বিভিন্ন জেলার পরিবহন শ্রমিক নেতারা এ সভায় অংশ নেন।

বৃহস্পতিবারও বৈঠক করেছিলেন শ্রমিক নেতারা। তবে বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলেননি তারা।

শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সভায় সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারা বাতিল, জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ কমানোসহ নয়টি বিষয়ে আপত্তি জানানোর বিষয়ে কথা হয়েছে তাদের।