সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আশা করি, গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নুত রাখতে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে অবদান রাখবে। দেশে যদি শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে তাহলে অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী।
“তাই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেই অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষ যেন শান্তি ও নিরাপদে বাস করতে পারে সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় চেইন অব কমান্ড মেনে এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দেশ গঠনে তার ভূমিকা রেখে যাবে।”
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশের আর্তমানবতার সেবায় সব সময় ভূমিকা রেখে চলে। একদিকে যেমন দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে, পাশাপাশি যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে।”
বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ভূমিকা পালনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে প্রশংসা কুড়িয়েছে, তাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক শান্তিরক্ষী অন্য দেশে শান্তি রক্ষা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। তাদের আত্মারর মাগফেরাত আমি কামনা করি,” বলেন তিনি।
কয়েক দিন আগে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
“আমাদের প্রশাসনের সাথে, বর্ডার গার্ডের সাথে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সাথে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে এখানে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে তার ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে, নিরাপত্তার ব্যবস্থাও নিচ্ছে।”
উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। নিজেরা নিজের দেশকে গড়ে তুলতে চাই। সকলে যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সাথে নিজের দেশকে গড়তে চাই।
“কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও কাছে মাথা নত করে নয়, বিশ্ব দরবারে বাঙালি মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সাথে চলবে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা চলব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেভাবে আমরা দেশকে গড়তে চাই,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, বিদেশে থাকায় দুই বোনের প্রাণে বেঁচে যাওয়া, শরণার্থী জীবন এবং ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “মূলত আমার পরিবার, কামাল জামাল দুটো ভাই দুই জনই মুক্তিযোদ্ধা। জামাল স্যান্ড হার্স্ট থেকে কমিশন নিয়ে আমাদের সেনাবাহিনীতেই যোগ দিয়েছিল। আর আমার ছোট ভাই ১০ বছরের রাসেল, তারও জীবনের লক্ষ্য ছিল যে বড় হলে সে সেনাবাহিনীতে যোগদান করবে। দুর্ভাগ্য, সেই স্বপ্ন তার আর পূরণ হয়নি। ১৫ ই অগাস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট তাদের কেড়ে নেয়।”
স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদউদ্দোজা চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ ১৪ দলের নেতারা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য বিভিন্ন দলের নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তাদের সহধর্মিনীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, তাদের পরিবারের সদস্য এবং বিদেশি কূটনীতিকসহ অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তার আগে সম্প্রসারিত এবং পুনর্নির্মিত সেনাকুঞ্জের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।