সড়কে আইন মানার প্রবণতা কম: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সবার মধ্যে আইন মানার প্রবণতা ‘কম’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, আইন মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2019, 11:39 AM
Updated : 21 Nov 2019, 12:40 PM

গাড়ির চালক, হেলপার, পথচারীসহ সাধারণ মানুষের দায়িত্ব, করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে সচেতন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে চলমান ট্রাফিক সচেতনতা পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সড়কে চলাচলের সময় পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও পথচারীরা আইন মেনে চললে ‘অনেকখানি’ সফল হওয়া সম্ভব।

"আমরা কেউ আইন মানতে চাই না, আইন মেনে চললে সম্মানবোধ হয় এবং সম্মানিত হওয়া যায়। এটা কেউ...।"

রাস্তায় চলতে কার কী দায়িত্ব, করণীয়-বর্জনীয় সে বিষয়ে সচেতন করতে ট্রাফিক পক্ষ পালন করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা মনে করি আইন যথাযথভাবে মানলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।”

আইজিপি  মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, অনেক কারণে ঢাকা শহরে ট্রাফিক জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করছে। এ কাজে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাফিক এডুকেশন, ট্রাফিক এনভারয়নমেন্ট ও ট্রাফিক এনফোর্সমেন্টের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ ট্রাফিক এনফোর্সমেন্টের একটি অংশ পালন করে থাকে।

“সড়কে কোনো কিছু হলে আমরা ট্রাফিক পুলিশকে দোষারোপ করে থাকি। আমরা যারা রাস্তা ব্যবহার করি, আমাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের সকলের মধ্যে যেন আইন না মানার সংস্কৃতি কাজ করে।”

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি  বলেন, “আইন প্রয়োগের কারণে আমার কোনো অফিসার বদলি হবেন না। তবে আইন প্রয়োগের সময় অবশ্যই তাকে বিনয়ী হতে হবে।”

আর নাগরিকদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, “একটি জাতিকে চেনা যায় তার ট্রাফিক শৃঙ্খলা দেখে। আসুন আমরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখি।”

সড়ক পরিবহন আইন

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে পাস হওয়া ওই আইন এ বছর বাস্তবায়ন করার সময় কয়েকটি ‘যৌক্তিক জটিলতা’ দেখা যায়।

“সমস্যা সমাধানে বুধবার মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে সকল গাড়ির চালক হালকা লাইসেন্স নিয়ে মিডিয়াম, মিডিয়ামের লাইসেন্স নিয়ে হেভি গাড়ি চালাচ্ছেন, তাদেরকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে লাইসেন্স আপডেট করে নেওয়ার জন্য।”

ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকরা এ আইন সংশোধনের জন্য বৈঠকে ৯ দফা দাবি তুলেছিলেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “বাকিগুলো যুগোপযোগী হিসেবে তারা সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা প্রস্তাব আকারে ৯ দফা দাবি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করব। সড়ক ও সেতু মন্ত্রী এ বিষয়ে যৌক্তিক ব্যবস্থা নেবেন।"

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দূরপাল্লার ট্রাক ও লরি চালকদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরি করা হচ্ছে, কারণ বিশ্রাম ছাড়া গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।

‘রেকারিং’ নিয়ে আপত্তি এনায়েত উল্লাহর

ট্রাফিক পুলিশ যখন তখন গাড়ি ‘রেকারিং’ করে অভিযোগ করে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানান সড়ক পরিবহন ও বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

তিনি বলেন, “আগামী ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গাড়ির চালকদের যার যার যে বৈধ লাইসেন্স আছে তা দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন। তবে এই সময়ের মধ্যে নিজেদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আপডেট করে নিতে হবে। এটাই শেষ সুযোগ, এরপর কোনো আপত্তি চলবে না “

সংশ্লিষ্ট সবাইকে সারা দেশে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অনুরোধ জানান এনায়েত উল্লাহ।

ডিএমপি কমিশনারের আশ্বাস

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক পরিবহন আইনটি করা হয়েছে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য, জরিমানা আদায় করা সরকার বা ট্রাফিক পুলিশের উদ্দেশ্য নয়।

“সড়কে যদি শৃঙ্খলা থাকে তাহলে মামলা করার কোনো প্রয়োজন নেই। মূল কাজটা হল সড়কে যদি সবাই ট্রাফিক আইনটা মেনে চলেন তাহলে ট্রাফিক পুলিশের মামলা করার কোনো প্রয়োজন নাই।”

মালিক-শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “রাস্তায় যে গাড়িটি অচল হয়েছে সেটি রেকারিং হবে অথবা যে গাড়িটি রাস্তায় ড্রাইভার ছাড়া দীর্ঘ সময় অবস্থান করে যানজটের কারণ হচ্ছে সেই গাড়িটি রেকারিং করা হবে। এর বাইরে কোনো রেকারিং করা হবে না।”

রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানে পরিবহন মালিক-শ্রমিক, চালক, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী, ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সচেতনতা পক্ষের এই কর্মসূচি চলবে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।