তদন্ত সংস্থার মর্যাদা পেল পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে গড়ে তোলা পুলিশের বিষেশায়িত শাখা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটকে (এটিইউ) তদন্ত সংস্থার মর্যাদা দিয়ে বিধিমালা জারি করেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2019, 10:25 AM
Updated : 21 Nov 2019, 10:25 AM

এই ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে গত মঙ্গলবার ‘অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বিধিমালা-২০১৯’ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

এর ফলে আসামি গ্রেপ্তার, মামলার তদন্ত ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ফলোআপ অভিযান চালাতে পারবে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট।

এতদিন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের অভিযোগে কাউকে ধরলেও মামলার তদন্ত করতে পারত না এটিইউ। আসামিকে থানায় হস্তান্তর করতো এটিইউ; থানা পুলিশ বা অন্য সংস্থা মামলার তদন্ত করত।

বিধিমালা অনুযায়ী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো গ্রেপ্তার, আটক, তল্লাশি ও জব্দসহ অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন ইউনিটের কর্মকর্তারা।

এই ইউনিটের অধীনে স্পেশাল ওয়েপন অ্যান্ড ট্যাকটিস (সোয়াট) টিম, ক্রাইম সিন ও বোম ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন টিম, ক্রাইসিস ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম, এক্সপ্লোসিভ ডিসপোজাল টিম এবং কে-নাইন স্কোয়াডসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিশেষায়িত টিম বা স্কোয়াড গঠন করতে পারবেন এই ইউনিটের প্রধান।

উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্তসহ তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে এবং এসংক্রান্ত মামলা তদন্তে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গবেষক ও ধর্মীয় চিন্তাবিদের সহায়তা নেওয়া যাবে। ইউনিটের জন্য স্থাপন করা হবে গবেষণা, প্রশিক্ষণ সেল ও ডাটাবেজ সেন্টার। একটি লিগ্যাল সেলও গঠন করা হবে।

২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এটিইউ অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এটিইউয়ের কার্যক্রম এখন রাজধানীর বারিধারার বি-ব্লকের ৩৫ নম্বর বাড়ির অস্থায়ী কার্যালয়ে চলছে।

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য বাড়ি খোঁজা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সব মিলে পাঁচ শতাধিক জনবল নিয়োগ হয়েছে। আরও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি জানান, এই ইউনিটের গঠন ও এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫৮১টি পদ সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে ৩১টি ক্যাডার পদ ও ৫৫০টি অস্থায়ীভাবে সৃষ্টি করা হয়, যানবাহন যুক্ত করা হয় ৪১টি। ইউনিটের প্রধান হিসেবে একজন অ্যাডিশনাল আইজি, একজন ডিআইজি, দুইজন অতিরিক্ত ডিআইজি, পাঁচজন এসপি, ১০ জন অ্যাডিশনাল এসপির পদায়ন হয়ে গেছে। এএসপি পদে ১২ জনের মধ্যে কয়েকজনের পদায়ন হয়েছে। ৭৫ জন ইন্সপেক্টরের পদায়ন হয়েছে। ১২৫ জন সাব ইন্সপেক্টরের মধ্যে এখনও কিছু বাকি আছে। কনস্টেবলসহ অন্যান্য পদবিতেও পুরো নিয়োগ হয়নি।

বিধিমালায় এটিইউয়ের কার্যাবলী নিয়ে বলা হয়েছে, কাউন্টার র‌্যাডিক্যালাইজেশন এবং ডি-রেডিক্যালাইজেশনসহ অন্যান্য কার্যক্রম হাতে নেওয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এটিইউ।

গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার সহায়তায় উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের ওপর প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা নজরদারি করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা, তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধসহ আটকের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে এই সংস্থা।

সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলা এবং এর সম্ভাব্য প্রতিকারে আইজিপির নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময় করবে এটিইউ।

উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণ ও প্রতিকারসংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও বিন্যাসের মাধ্যমে ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন দিতে হবে।