স্বাভাবিক হয়নি বাস চলাচল

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনরত ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলেও বাস চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2019, 06:39 AM
Updated : 21 Nov 2019, 09:43 AM

আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না থাকলেও গত তিন দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন দেশের অনেক এলাকার বাস চালক ও শ্রমিকরা। 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাবতলী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়লেও সংখ্যায় এখনও কম। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে অর্ধেক বাসও ছাড়েনি।

সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “কাল রাত থেকেই বাস চলাচল শুরু হয়েছে।… শতভাগ না হলেও পূর্বাঞ্চলের নব্বই শতাংশের বেশি গাড়ি ছেড়ে গেছে।”

তবে সায়েদাবাদে অধিকাংশ বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর সংখ্যাও কম। 

হিমাচল পরিবহনের কাউন্টার কর্মী সুমন বলেন, “গতকাল কোনো গাড়ি চলাচল করেনি। আজ কিছু গাড়ি চলছে, তাও খুব কম।”

ইউনিক পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী রিপন বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রামে তাদের গাড়ি যাচ্ছে। অন্য রুটের গাড়ি ছাড়ার কোনো ‘নির্দেশনা’ এখনও তারা পাননি।

চালকদের অনেকে বাড়ি চলে যাওয়ায় মহাখালী থেকে এখনও সব বাস চলাচল শুরু হয়নি বলে জানান মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাস শ্রমিকরা কোনো আন্দোলনে নাই। কিন্তু তারা বাড়ি চলে গিয়েছিল। ফলে সব গাড়ি চলছে না। চলছে পঞ্চাশ শতাংশের কম।”

গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গের কিছু বাস ছেড়ে গেলেও দক্ষিণবঙ্গের বাস একেবারেই চলছে না।

গাবতলী আন্তঃজেলা বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য মো. সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাবতলী টার্মিনাল থেকে বাস সেভাবে এখনও ছাড়তে পারছি না। অনেক যাত্রী এসে বসে আছেন, এটা সত্যি। দূরপাল্লার রুটে আমরা যেখানে ১০টা গাড়ি ছাড়তাম, সেখানে ছাড়ছি ২টা গাড়ি।”

তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে খুলনার রুটে। খুলনার বিক্ষুব্ধ  শ্রমিকরা এখনও গাড়ি ছাড়তে চাইছেন না।

খুলনা রুটের দিগন্ত পরিবহনের হেল্পার ফারদিন শেখ বলেন, “খুলনার শ্রমিকরা গাড়ি ছাড়তে দিতেছে না। ওইখান থিকা গাড়ি কখন আইব, কখন এহান থেকে ছাড়ব, তা জানি না।”

ঢাকা-খুলনা রুটের ঠিকানা পরিবহনের মালিক বাবুল মিয়া বাবলু বলেন, “গতকাল রাতেই তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এসেছে। তারপরও কেন শ্রমিকরা গাড়ি ছাড়তে দেবে না? প্রশাসন কি করছে? কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?”

দূরপাল্লার রুটের সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “সোহাগের যে গাড়িগুলো ছেড়ে গিয়েছিল খুলনার দিকে, সেগুলো ফিরছে না। শ্রমিকরা সে গাড়িগুলো আসতে দিচ্ছে না। তাহলে ঢাকায় গাড়ি পাব কই? তাই এই সংকট।”

তবে বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাস-ট্রাক মালিক সমিতির এই নেতা।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, “এখন কম কম করে বাস ছাড়ছে। তবে টার্মিনালে অনেক যাত্রী। বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।"

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার পরিবহন শ্রমিকরা এখনও কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। 

যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা এখনও ‘স্বেচ্ছায়’ কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন।

আমাদের যশোর প্রতিনিধি জানান, এ জেলা থেকে ১৮টি রুটে বাস চলাচল করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোনো রুটের বাসই ছাড়েনি।

বুধবার রাতে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাক মালিক-শ্রমিকদের বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যহারের ঘোষণা আসায় সকাল থেকে যশোরের বাস স্ট্যান্ডে যাত্রীো ভিড় করতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।

যশোর শহরের খাজুরা বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষমাণ সাইদুজ্জামান সুমন বলেন, তার ঢাকায় যাওয়া খুব প্রয়োজন, কিন্তু পারছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা মোর্তজা বলেন, “ঢাকার মিটিংয়ের বিষয়ে শ্রমিকরা অবগত নয়। আজ শ্রমিকদের সাথে সরকারের প্রতিনিধিদের সভা হবে। ওই সভা ফলপ্রসূ হলে বাস চলাচল শুরু হবে।”

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, “আমরা গত তিন দিন ধরে চেষ্টা করেছি। কিন্তু শ্রমিকরা আমাদের কথা শুনছেন না। তারা আইন সংশোধন না হলে গাড়ি চালাতে রাজি নন। ঢাকায় আলোচনা হচ্ছে, কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত হলে তারপর গাড়ি চলাচল শুরু করা যাবে।”

তবে চট্টগ্রাম ও ঝালিকাঠিসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে বাস চলাচল শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামের সেন্টমার্টিন পরিবহন ও সোহাগ পরিবহনের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাত থেকেই তাদের বাস নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে।

ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে যাওয়া এবং রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়ি বন্দরে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, “বন্দরের জেটিগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে যানবহান বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহনও বন্দরে আসছে।”

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ নয় দফা দাবিতে বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচি ঘোষণা করে মঙ্গলবার। বুধবার সকাল থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ট্রাকের সঙ্গে সারাদেশে বাস চলাচলও কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দিলে ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।