মিরপুরে বাস ভাংচুর, চালক-যাত্রীকে ‘মারধর’

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে ডাকা ধর্মঘটের মধ্যে রাজধানীর মিরপুরে কয়েকটি বাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিআরটিসি বাসের একজন চালক এবং যাত্রীকে মারধরের অভিযোগও পাওয়া গেছে ধর্মঘটী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 12:08 PM
Updated : 20 Nov 2019, 12:08 PM

বুধবার সকাল থেকেই মিরপুরের দুয়ারিপাড়া মোড়ে শ্রমিকরা ব্যক্তিগতসহ সব ধরনের যান চলাচলে বাধা দেন।

দুয়ারিপাড়া মোড়ে রাসেল শেখ নামের এক শ্রমিক বলেন, “আমরা পেটের তাগিদে রাস্তায় নামছি ভাই। আমাগো পেটে লাথি মাইরা আইন করছে সরকার। আইজ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে ব্যবসা করতাম, বাস চালাইতাম না।”

সড়ক পরিবহন আইন মেনে চললে তো জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে আইন না মানার প্রবণতা থেকেই এই অবরোধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা রাস্তায় নামলেই দোষ। আমরা আইন না ভাঙ্গলেও আমাগো ট্রাফিকরা শাস্তি দেয়। ঢাকার ভিতরে তো তবু কম। হাইওয়ে রোডে যাইয়া দেখেন পিকআপ-গাড়ি সব থামায় থামায় ট্রাফিকরা টাকা নেয়। আগে এইগুলা বন্ধ কইরা নতুন আইন করতে কন।”

অন্যদিকে কালসী মোড়ে দুপুর ১টার দিকে শ্রমিকরা জড়ো হতে শুরু করে। এসময় মিরপুর থেকে গুলশান-বাড্ডা-উত্তরাগামী সব বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকজন বাস চালক ও যাত্রীকে মারধরও করেন অবরোধকারী শ্রমিকরা। ভেঙে দেওয়া হয় কয়েকটি বাসের জানালা।

কালসীতে বিআরটিসির একটি বাসের চালক ও একজন যাত্রীকে মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই বাসের যাত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকেও শ্রমিকরা মারধর করে।

মারধরের শিকার ওই ছাত্র বলেন, শ্রমিকরা যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে চালক প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকরা চালককে মারধর করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। তখন শ্রমিকরা তাকেও মারধর করেন।

দুর্ভোগের শিকার আরেক যাত্রী শাহাজাদা শুভ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “এভাবে মাঝ রাস্তায় হুট করে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া কোন ধরনের সিস্টেম? আগে থেকে জানতে পারলে অন্য ব্যবস্থায় আসতাম।

“এখন মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হল, এতে অফিসে পৌঁছানোও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকারের উচিত কঠিনভাবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”

কালসীতে ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদের।

ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ কালশী মোড়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তাদের ১৫ মিনিটের তৎপরতায় বাস চলাচল শুরু হয়।

এসময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের থানায় বৈঠকের আশ্বাস দিয়ে শান্ত করেন পল্লবী থানার ওসি (অপারেশন) এমরানুর রহমান।

তবে এরপরও প্রায় ঘণ্টাখানেক বিক্ষিপ্তভাবে চলতে থাকে সড়ক অবরোধ। অবশেষে বেলা তিনটা নাগাদ পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা এমরানুর রহমান বলেন, “আমরা খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। পরিবহন শ্রমিক নেতা কয়েকজনের সাথেও কথা হয়েছে। তারা ঘটনা সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছেন। পুরো ব্যাপারটা আমরা নজরদারির ভেতরে রাখছি, যেন নতুন করে আর জনদুর্ভোগের সৃষ্টি না হয়।”

এদিকে দুপুরে দিকে কাজীপাড়া এলাকায় কিছু পরিবহন শ্রমিক রোকেয়া সরণীতে নেমে বিক্ষোভ করে ও যান চলাচলে বাধা দেয় বলে জানিয়েছেন কাফরুল থানার ওসি সেলিমুজ্জামান।

খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যাওয়ার পরই শ্রমিকরা চলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।