ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে দোতলা ওই টিনশেড মার্কেটে আগুন লাগার খবর পান তারা।
দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ডাম্পিং শেষে রাত সোয়া ৮টায় আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “১৪-১৫টি দোকান আগুনে পুরোপুরি পুড়ে গেছে। সেগুলো মূলত আন্ডার গার্মেন্টসের দোকান।”
মার্কেটের এক কর্মী ফায়ার কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ধোঁয়ায় কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর বাইরে আর কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কীভাবে আগুন?
১৯৯৫ সালে চালু হওয়া রাজধানী সুপার মার্কেটের পাশেই তুলনামূলক ছোট জায়গা নিয়ে পরে গড়ে ওঠে নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট। দোতলা এ মার্কেটের উপরে ৭৭টি এবং নিচে ৭৭টি দোকান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।
মার্কেটের দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানালেও কীভাবে সেখানে আগুন লাগলো, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
তবে রাসেল নামে এক দোকানি বলেন, দোতলায় তাদের ফোমের গোডাউন ছিল। দোকানের পাশে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। সেখানে থেকে ফুলকি এসে পড়ে ফোমে। তারপর দোকানটি পুড়ে যায়, আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আরেকজন দোকানদার জানিয়েছেন, দ্বিতীয় তলার বিক্রমপুর ক্লথ স্টোরে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার সময় আগুনের সূত্রপাত হয়।
দোতলার ওই এলাকায় পোশাক, টেইলার্স, কসমেটিকস, খেলনা ও কয়েকটি খাবারের দোকানও ছিল ছিল বলে জানান নিচতলার 'আল মাহের জুয়েলার্স এর মালিক আবু তাহের।
তিনি বলেন, নিচতলায় তার দোকানসহ মোট ৪৩টি গয়নার দোকান আছে। আগুন লাগার পর প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় শাটার নামানো হলেও অনেকে তালা মারতে পারেননি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর নিচতলার গয়নার দোকানের মালিকরা যার যার দোকানের সামনে অবস্থান নেন। তবে কেউ দোকান খোলেননি।
দোকানের নিরাপত্তা দিতে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও সেখানে আছেন বলে ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান।
ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই এলাকার মার্কেটগুলো বন্ধ থাকে রোববার। আগুন যখন লাগে তখন সব দোকানই খোলা ছিল।
“বিকালে মার্কেটের ওপরে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যবসায়ী ও অন্যরা বেরিয়ে আসেন। বহু দূর থেকেও এলাকায় আগুন ও ধোঁয়া দেখা যায়।”
আগুন লাগার পর পাশের অভিসার সিনেমা হল সংলগ্ন রাস্তা এবং মতিঝিল শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ এবং দয়াগঞ্জমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেন।
দোকানিদের ভাষ্য
টিকাটুলীর নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে প্রায় ১৬ বছর ধরে ব্যবসা করছেন দুই ভাই বাবুল মিজি ও ফারুক মিজি। মার্কেটের নিচ তলায় ‘ফয়সাল বেডিং’ নামে তিনটি দোকান রয়েছে তাদের।
আগুনে তিনটি দোকানই ভস্মীভূত হয়েছে এবং তাতে ৭৫ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেন ফারুক মিজি।
তিনি বলেন, “বিকাল সোয়া ৫টার দিকে যখন আগুন লাগল, তখন তিন দোকানে আমাদের ১৪ জন কর্মচারী ছিল। সবাই প্রাণ নিয়ে কোনোরকমে বের হয়ে আসছি। কোনো কিছু্ বের করতে পারিনি। আমরা একেবারে শেষ হয়ে গেলাম।”
নিচতলার ৬৯, ৭৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে এমবি ফ্যাশন নামে একটি কাপড়ের দোকান রয়েছে তানভীর শেখের। তার দোকানও পুড়ে গেছে।
নিচ তলার ৬৫, ৬৬ হোল্ডিংয়ের আবীর ফ্যাশনের মালিক তামজিদ মিয়াজী বলেন, “আমাদের দোকানেও আগুন লেগেছে। তবে ভেতরে যেতে পারি নাই। কতটা পুড়েছে বলতে পারছি না।”
২৭ নম্বর হোল্ডিংয়ে জেক্স ফ্যাশনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “আগুন যখন লাগলো, তখন টের পাই নাই। আগুনের শিখা দেখে সব ফেলে চলে আসি। দোকানটা পুড়ে গেল!”
বড় ক্ষতি হতে পারত
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, তারা হাইরাইজ মেশিন দিয়ে চারপাশ থেকে পানি দিতে পারায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হয়েছে।
আর পরিচালক (অপারেশনস) জিল্লুর রহমান বলেন, “আগুন কীভাবে লেগেছে, তা তদন্তের পরে জানা যাবে। তবে এই মার্কেট একেবারেই অপরিকল্পিত। আগুন নেভাতে যে পরিমাণ পানির উৎস এখানে প্রয়োজন ছিল তা আমরা পাইনি।”
তিনি বলেন, আগুন লাগার পর খবর পেয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে তাদের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
“খুব অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। আশপাশে অনেক আবাসিক ভবন, হাইরাইজ ভবনও আছে। আগুন দ্রুত নেভাতে না পারলে বড় ক্ষতি হতে পারত।”