লবণ নিয়ে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: সরকার

দাম বেড়ে যাওয়ার কথা ছড়িয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে লবণ কেনার হিড়িক তৈরির মধ্যে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 12:53 PM
Updated : 19 Nov 2019, 01:12 PM

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরকারি এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, দেশে লবণের কোনো সংকট নেই বা এমন কোনো সম্ভাবনাও নেই।

“লবণ নিয়ে কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কোনোভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পেঁয়াজের পর লবণের সংকটের কথা ছড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টার মধ্যে এই প্রেস নোট দিয়েছে সরকার। বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য অধিদপ্তর প্রেস নোট জারি করে।

লবণ নিয়ে কারসাজি দমনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী।

“তারা বাজার মনিটর করে যাকে জেল দেওয়ার দরকার, তাকে জেল-জরিমানা করবে।”

বর্তমানে দেশে সাড়ে ৬ লাখ টন লবণ মজুদ রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “এটি একেবারেই একটা অবাস্তব সুযোগ নিচ্ছে শুধুমাত্র একটা গুজব দিয়েই, বাস্তবে এর কোনো কারণ নেই।”

দেশে লবণের উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানিও বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো কারণ নেই দাম বাড়ার।”

লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে সোমবার সন্ধ্যার পর সিলেট, হবিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, নেত্রকোনা জেলায় গুজব ছড়ায় এবং তাতে লবণ কেনার হিড়িক শুরু হওয়ায় দাম যায় বেড়ে। মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায়ও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

প্রেস নোটের আগে দুপুরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশে চাহিদার ছয় গুণ বেশি লবণ মজুদ থাকার তথ্য জানিয়ে কাউকে গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে লবণের বাজার অস্থিতিশীল করে জনগণের পকেট কাটতে না পারে সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতও নামানো হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সঙ্কট রয়েছে মর্মে গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।”

লবণের মজুদের কোনো সঙ্কট নেই জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা কম-বেশি ১ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন।

“সে হিসাবে লবণের কোনো ধরণের ঘাটতি বা সংকট হবার প্রশ্নই ওঠে না।”

লবণ সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি ‘কন্ট্রোল রুম’ খুলেছে।

লবণ নিয়ে কারসাজি দমনে ঢাকার বাজারে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত

লবণ সংক্রান্ত বিষয়ে সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০২-৯৫৭৩৫০৫ এবং ০১৭১৫-২২৩৯৪৯।

গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় নেত্রকোনায় তিন ব্যবসায়ীর অর্থদণ্ড হয়েছে, হবিগঞ্জে সাজা দেওয়া হয়েছে চারজনকে। ঠাকুরগাঁও ও গোপারগঞ্জে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

এসব স্থানে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ ব্যাপক হারে লবণ কিনতে শুরু করলে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে অধিকাংশ দোকানে লবণ ফুরিয়ে যায়।

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, গুজব ছড়ানোর পর চরাঞ্চলের সহজ সরল মানুষ হুড়াহুড়ি করে লবণ কিনতে ভিড় জমায় বিভিন্ন দোকানে। কেউ কেউ ৫ কেজি, কেউ কেউ ২০ কেজি করে লবণ কিনছিলেন।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে লবণের কেজি ২০০ টাকা হয়ে যাবে। এতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ায় মঙ্গলবার দুপুরের আগে ডিলার ও অনেক পাইকারির ব্যবসায়ীর গুদাম শূন্য হয়ে যায়।

পাইকারি ব্যবসায়ী গনেশ সাহা বলেন, “সকাল থেকেই আমাদের দোকানে লবণ কিনতে সাধারণ মানুষ ও খুচরা বিক্রেতারা ভিড় করে। দুপুর ১২টার মধ্যে আমাদের সমস্ত লবণ বিক্রি হয়ে যায়।।”

কোটালীপাড়ায় লবণ কিনতে আসা এক ভ্যানচালক বলেন, “গতকাল রাতে ঢাকা থেকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে বলেছে, লবণের কেজি ২০০ টাকা হবে।”

এই অবস্থায় খুচরা বিক্রেতাদের একজনের কাছে এক কেজি-২ কেজির বেশি লবণ বিক্রি করতে মানা করা হয়েছে বলে জানান কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহসিন উদ্দিন।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, কিছুদিন আগে একটি মহল সিন্ডিকেট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছিল। এখন তারাই আবার লবণের দাম বৃদ্ধির জন্য গুজব ছড়াচ্ছে।