বুয়েটের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হচ্ছে: নওফেল

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2019, 01:01 PM
Updated : 18 Nov 2019, 02:21 PM

দেশের শিক্ষাঙ্গণের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বুয়েটে একটি ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেটার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও তৎপরতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শতভাগ ব্যবস্থা নিয়েছে।

“তারপরও কিছু ব্যক্তির ইন্ধনে এখানে অচলাবস্থা চালু করার জন্য আমাদেরই সন্তানদেরকে নানাভাবে উসকানি দেওয়া হচ্ছে এবং সেটা করার মাধ্যমে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবনকে বিপন্ন করা হচ্ছে, জনগণের অর্থ অপচয় করা হচ্ছে।”

বুয়েটের আন্দোলনে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তা স্পষ্ট না করে উপমন্ত্রী বলেন, “কারা এখানে ইন্ধন দিচ্ছেন আমি নাম উল্লেখ করতে চাই না। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে যে… জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদ বা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত একজন আইনজীবী তার সন্তানকে নির্দেশনা দিচ্ছেন যাতে এই আন্দোলন চলমান থাকে।”

“একজন প্রথিতযশা আইনজীবী যিনি একটি রাজনৈতিক জোটের সাথে সম্পৃক্ত তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে আইনি সহযোগিতা দেওয়ার জন্য, রাজনৈতিক আইনজীবী যারা আছে তাদের সম্পৃক্ত করার জন্য।”

উসকানিদাতাদের হুঁশিয়ার করে নওফেল বলেন, “আমাদের সন্তানদেরকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা যারা নিতে চায় তাদেরকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যবস্থাও কিন্তু আমাদের জানা আছে।”

গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে আবরারের মৃত্যুর পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

১০ দফার কয়েকটি মেনে নেওয়ার পর গত ১৫ অক্টোবর মাঠের আন্দোলন থেকে সরে আসে বুয়েট শিক্ষার্থীরা; তবে মামলার অভিযোগপত্র ও অন্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেয়।

আবরার হত্যায় মামলায় পুলিশ গত ১৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেওয়ার পরদিন ক্লাসে ফিরতে নতুন তিন শর্ত দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শর্তগুলো হল- আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা; আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলের আগের র‌্যাগের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া এবং  সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‌্যাগের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা করে বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে তা অন্তর্ভুক্ত করা।

আবরার হত্যা মামলার সব আসামিদের গ্রেপ্তার এবং অভিযোগপত্র দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।

“যেখানে সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে সেখানে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করার দাবি তুলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এক ধরনের অরাজকতা।”

সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, “সকল বিষয়ে আমরা তৎপর আছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পরও একটি গোষ্ঠী, যারা আমরা মনে করি যে অপরাজনীতি করবার জন্য সেখানে আন্দোলনের নাম করে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।”

তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “‘আপনাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন বিনষ্ট করবার জন্য যারা উসকানি দিয়ে থাকেন বা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, আপনাদের সন্তানদেরকে, আমাদের সন্তানদেরকে বোঝাতে হবে যে আমরা মেধাবী এবং আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছি, আমরা কারও অপরাজনীতির সুযোগ যেন না হই।”

নওফেল বলেন, “অনেকে চেষ্টা করছে, মাঠের রাজনীতিতে পরাজিত হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমার সন্তানকে, আপনার সন্তানকে উসকানি দিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে সরকারবিরোধী একটা রাজনীতি দেশে চালু রাখতে। সেই অপরাজনীতিক শক্তিদেরকেই বলব- উন্মুক্ত রাজনীতিতে আপনারা আসুন কিন্তু গোপনে উসকানি যারা দিচ্ছেন আমাদের কাছে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনেক তথ্যই আসে, প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা দেখছি, কে কোথা থেকে কোন ধরনের উসকানি দিচ্ছেন।”

আরও দুই সপ্তাহ নিল বুয়েট প্রশাসন

আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের তিন শর্ত পূরণে আরও দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের তিন শর্ত পূরণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলাম।

সোমবার দুপুর দুইটার দিকে বুয়েট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনার পর এ তথ্য জানা যায়।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, “দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি দাবিগুলো বাস্তবায়নে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। তবে আমরা দুই সপ্তাহের মধ্যে এগুলো পূরণের চেষ্টা করো। ভিসি স্যার তাদের এই আশ্বাস দিয়েছেন।”

তবে শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।