গুলশান হামলার মামলার রায় ২৭ নভেম্বর

তিন বছর আগে যে জঙ্গি হামলা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছিল অনেকখানি, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সেই হামলার আলোচিত মামলার রায় হবে আগামী ২৭ নভেম্বর।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2019, 10:49 AM
Updated : 26 Nov 2019, 01:51 PM

আলোচিত ওই মামলার বিচার শুরুর পর বছর গড়ানোর ঠিক আগে রোববার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের চার দিনব্যাপী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে বিচারক আজ মামলার রায়ের জন্য ২৭ নভেম্বর তারিখ ধার্য করে দেন।”

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে দাবি করে আসছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা।

২০০৯ সালের এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হত্যার অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

গুলশান হামলার মামলার আসামিদের কয়েকজন।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের জবানবন্দি নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার শুরু হয়েছিল।

তার আগে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ওই বছরের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজেন বেকারিতে হয়েছিল ভয়াবহ ওই হামলা; হামলাকারীরা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে হত্যা করে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

হামলায় আহত গোয়েন্দা পুলিশের এসি রবিউল ইসলামকে সহকর্মীরা নিয়ে যান হাসপাতালে। ওই রাতেই মৃত্যু হয় তার।

পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন। তারা হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

নব্য জেএমবি ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় হামলা চালিয়ে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে এই হামলার ছক কষেছিল বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।

এরা এখন স্মৃতির পাতায়; গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন তারা।

নজিরবিহীন ওই হামলা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিপজ্জনক বিস্তারের মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে। হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে দলটির শীর্ষনেতাদের বেশ কয়েকজন মারা পড়েন।

এই হামলায় জড়িত হিসেবে যে আটজনকে জীবিত গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয় হামলার পর এসআই রিপন কুমার দাসের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাটিতে।   

আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

এই আদালতেই হয় গুলশান হামলার বিচার।

রোববার রায়ের তারিখ ঘোষণার সময় এই আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তারা সবাই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

এই মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়, তার মধ্যে সর্বশেষ জন ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গুলশান হামলার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।

সাক্ষ্যে হুমায়ুন কবির বলেছিলেন, “হলি আর্টিজানে হামলার আগে জঙ্গিরা বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করে। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া বাজার এলাকার কলেজ মোড়ে একটি বাসায় মিটিং করে প্রথমে তারা হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা করে।

“হলি আর্টিজান বেকারি কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত থাকায় সেখানে হামলা করার পেছনে কারণ ছিল জঙ্গিদের নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেওয়া। এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটনানোর পাশাপাশি তারা এর মাধ্যমে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচার করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চেয়েছিল।”

হামলাকারী পাঁচ তরুণ- নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “এই হামলার সাথে জড়িত ২১ জনকে আমি শনাক্ত করি। এর মধ্যে ১৩ জন জঙ্গি পুলিশের বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়। বাকি আটজনকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।”

মামলার অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে ‘অস্থিতিশীল করা’ এবং বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো।