কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উদ্দেশ্য নিয়ে আসকের প্রশ্ন

আবাসিক ভবনের অনাবাসিক ব্যবহারের জন্য আইন ও সালিশ কেন্দ্রকে (আসক) ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা করার ঘটনায় ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2019, 04:22 PM
Updated : 15 Nov 2019, 04:22 PM

রাজউক যেভাবে আসক কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে তাতে অলাভজনক, সেবামূলক, উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব হমকির মুখে পড়বে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

রাজধানীর লালমাটিয়ার আসকের কার্যালয়ে আগের দিনের অভিযানের পর শুক্রবার সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করে উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা তুলে ধরেন তারা।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা লিখিত বক্তব্যে বলেন, আসক ভবনের মালিক নয়, ভাড়াটে হিসেবে ভবন ব্যবহার করছে। তবুও ভ্রাম্যমাণ আদালত অফিস সিলগালা করে দেওয়াসহ কর্মীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে ‘জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি’ আদায়ের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠে- বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে আসককে জরিমানা করা হয়েছে।

“রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ ধরণের কার্যক্রম আসকসহ সব অলাভজনক, সেবামুলক, উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অস্তিত্বকে হমকির মুখে ফেলেছে, যা মানবাধিকার রক্ষার কার্যক্রমকে সংকুচিত করবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।”

লালমাটিয়ার বি ব্লকের ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ তলা ভবনের চারটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে আসক। ওই বাড়ির বিভিন্ন তলায় সাতটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সেখানে অভিযান চালিয়ে আবাসিক ভবনে অনাবাসিক কার্যক্রম চালানোর দায়ে আসককে ২ লাখ টাকাসহ সব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ টাকা ও বাড়ির মালিককে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সব প্রতিষ্ঠানকে দুই মাসের মধ্যে ওই ভবন ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার।

১৯৫২ ইমারত নির্মাণ আইন ৩ (ক) ধারা অনুযায়ী, মালিক বা দখলদার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কমিটির পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো ভবন অনুমোদনে উল্লেখিত উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না।

বিশেষ উদ্দেশ্যটা কী জানতে চাইলে আসক নির্বাহী পরিচালক বলেন, “আসক একটা মানবাধিকার সংস্থা। ৩৩ বছর ধরে কাজ করছি। দেশের প্রতিযশা মানুষের হাত ধরেই এ সংস্থার যাত্রা। আমরা এ জায়গায় এসেছি।

“এসব জানা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত শুনিনি কোনো এনজিওকে এরকম একটা মোবাইল কোর্ট দিয়ে বলেনি, ভাড়া করা বাড়িতে থাকেন কেন? এসব দেখে আমাদের মনে হয়, বিশেষভাবে আমাদের ওপর কেন এতো ক্ষিপ্ত হলেন সেটা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম, যে আইনটা আমাদের ওপর প্রযোজ্য নয় সেটা চাপিয়ে দলেন। হয়তো বা কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।“

এক প্রশ্নের জবাবে শীপা হাফিজা বলেন, “আমরা আসক থেকে অনেক দিন ধরে অনেকবার বলে আসছি- মোবাইল কোর্ট আইনটা অনেকটা বিতর্কিত, এখানে অনেক বিষয় রয়েছে।

“একটা হচ্ছে- তারা ক্যাশ টাকা ছাড়া টাকা নেবেন না; আমাদের মতো ছোট সংস্থা থেকে হঠাৎ করে চাইলে লাখ লাখ টাকা চাইলে ক্যাশ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারা বলে যে, ৩০ মিনিটের মধ্যে না দিলে এরেস্ট করে নিয়ে যাবে।”

বিষয়গুলো আইনে এভাবে নেই দাবি করে তিনি বলেন, আইনে আছে, কোনো উদ্দেশ্যে উনারা যদি অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি বলে আমি সম্পৃক্ত নই, বিচারিক আদালতে যেতে পারে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শীপা বলেন, মোবাইল কোর্টের সক্ষমতা এবং মনোভাব ও আচরণ নিয়েও প্রশ্ন আছে। তারা ভয় দেখিয়ে সিগনেচার আদায় করার চেষ্টা করেছিলেন, অন্যদের কাছেও এটা করবে।

“আমরা আড়াই ঘণ্টা নির্বাহী হাকিমকে সঙ্গে বুঝাতে চেষ্টা করেছি ইমারত আইনের সঙ্গে ভাড়াটের কোনো সম্পর্ক নেই- উনারা এটা বুঝতে চাননি। কাজেই আইনের সম্পর্কে তারা যদি পরিচ্ছন্ন না থাকে তাহলে মোবাইল কোর্ট সব সময় যে কোনো ধরনের অন্যায়কেও সহযোগিতা করতে পারে।”

রাজউকের ভ্রাম্যমান আদালত তাদের ‘ভয়’ দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আসক নির্বাহী পরিচালক।

শীপা হাফিজা বলেন, “এটা বলার কারণ হচ্ছে- তারা যেভাবে আগ্রাসী ভূমিকায় এসেছেন, উঁচু গলা নিয়ে এসেছেন; মানবাধিকার সংস্থা ৩৩ বছর ধরে আছি। আমাদের মতো সংস্থাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। সাধারণ জনগণের কাছে (ভ্রাম্যমান আদালতের) এ দলটাই তো যাবে। তখন সেখানে কী পরিস্থিতির তৈরি করবে।

“সেজন্য এ মোবাইল কোর্টের বিষয়ে আমরা সব সময় বলেছি- এটা একটা বিতর্কিত বিষয়। তারা যে আইন অনুযায়ী- কাগজটা পাওয়া আইনি অধিকার রয়েছে, তারা দেননি। ”

আসক মহাসচিব তাহমিনা রহমান বলেন, “রাজউক ভ্রাম্যমান আদালতের সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। যে অর্ডার দেওয়ার হয়েছে তা ন্যায়সঙ্গত নয়, এখানে বেশ কিছু ইস্যু রয়েছে। যে প্রসেসে করেছে তা সঠিক হয়নি। আমরা বসেছি..  যেসব পদক্ষেপ দেশের আইন খোলা রাখে সব নেব।”

রাজউক চেয়ারম্যানকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসকের বক্তব্য তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান।

আসক নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, “আমরা যখন আইনের আশ্রয় নেব- সব যুক্তি তুলে ধরে তা ব্যবহার করব।”