সাগর-রুনি খুন: তদন্তের হাল জানাতে হাই কোর্টের নির্দেশ

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে র‌্যাবের তদন্তে হতাশা প্রকাশের পর কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। আগামী বছরের ৪ মার্চের মধ্যে এই প্রতিবেদন দিতে হবে র‌্যাবকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকআদালত প্রতিবেদক ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 11:26 AM
Updated : 14 Nov 2019, 11:26 AM

আলোচিত এই মামলায় নিম্ন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে র‌্যাবের ৬৯তম বারের মতো ব্যর্থতার দিন বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতের এই আদেশ এল।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

একই সঙ্গে নিজের ক্ষেত্রে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদনকারী আসামি মো. তানভীর রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়েও প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

৪ মার্চ এই প্রতিবেদনও দিতে হবে। ওই দিনই এই মামলা নিয়ে পরবর্তী আদেশ দেবে হাই কোর্ট।

মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

থানা পুলিশ ও ডিবির হাত ঘুরে ঘটনার দুই মাস পর র‌্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায়। এরপর দফায় দফায় সময় নিলেও এখনও প্রতিবেদন দিতে পারেনি তারা, ফলে শুরু করা যায়নি বিচার।

এর মধ্যে তানভীর উচ্চ আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা বাতিলে আবেদন করলে তার শুনানিতে র‌্যাবের তদন্ত নিয়ে গত সোমবার হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বিচারকরা।

বৃহস্পতিবারের আদেশে আদালত তানভীরকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।  

আদালত বলেছে, দেশের সকল স্তরের মানুষের দৃঢ় প্রত্যাশা ছিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সমাপ্ত করে হত্যার মোটিভ (প্রকৃত কারণ), প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ও বিচারের সম্মুখীন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

“কিন্তু রুঢ় সত্য ও বাস্তবতা হলো, দীর্ঘ সাত বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও এ হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সমাপ্ত এবং প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।”

সাগর-রুনি (ফাইল ছবি)

তদন্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আদালত বলেছে, এই মামলায় এপর্যন্ত মোট ৮ ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হলেও এই হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদের কারও সম্পৃক্ততার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেননি।

“এফবিআই ৪ ব্যক্তির ডিএনএ শনাক্ত করেছে। তার মধ্যে ২টি ডিএনএ সাগর-রুনির। বাকি দুটি ডিএনএ’র সাথে গ্রেপ্তার আসামিদের ডিএনএ ম্যাচ করেনি। অর্থাত ওই দুই ব্যক্তিকে আজ পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমেরিকার বিশেষায়িত ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ’র উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য অপরাধীদের ‘অবয়ব’ তৈরির চেষ্টা চলছে।”

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে না পারলে চৌকস বাহিনী র‌্যাবের অন্য সব সাফল্য ম্লান হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছে আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। তানভীর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

সময় পেছাল ৬৯ বার

মামলা তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একের পর এক সময় নিচ্ছে র‌্যাব। ফলে নিম্ন আদালতে পড়ছে শুধু মামলার তারিখ, কিন্তু প্রতিবেদন আসছে না।

ঢাকার আদালতে বৃহস্পতিবারও সাগর-রুনি হত্যামামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তা জমা দিতে পারেননি বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআইর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি আবারও সময় চেয়ে আবেদন করেন। মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তখন ৩০ ডি‌সেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেন।

আদালত কর্মকর্তারা জানান, এ‌ নি‌য়ে এই মামলায় প্রতি‌বেদনটি দা‌খি‌লের তা‌রিখ ৬৯ বার পেছাল।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর।

৬২ দিন পর ডিবি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিলে হাই কোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার হাত ঘুরে এখন তদন্ত করছেন খন্দকার শফিকুল আলম।