‘অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বমূলক’ সম্পর্ক চায় নেপাল

বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে ‘অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে’ নিতে যেতে চায় নেপাল। এলক্ষ্যে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি।

সাজিদুল হক কাঠমান্ডু থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2019, 02:55 PM
Updated : 12 Nov 2019, 02:55 PM

সফররত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা করতে এসে একথা বলেন নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রদীপ কুমার গিওয়ালি।

মঙ্গলবার দুপুরে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারীর আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দেশটিতে পৌঁছান আবদুল হামিদ।

বিকালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত কাঠমান্ডুর ‘ভক্তপুর দরবার স্কয়ার’ পরিদর্শনে যান রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।

সন্ধ্যায় হোটেল ফেয়ারফিল্ড ম্যারিয়টে আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন গিওয়ালি।

সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, নেপাল সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। এখন সময় এসেছে এই সম্পর্ক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে নিয়ে যাওয়ার। নেপাল এই সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।”

প্রদীপ গিওয়ালি বলেন, রাষ্ট্রপতির এই সফর দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং সহযোগিতায় নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন হবে।

রাষ্ট্রপতি এসময় বলেন, দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের মংলা ও পায়রা বন্দর খুবই সম্ভাবনাময়। নেপাল বিশেষ করে মংলা বন্দর ব্যবহার করে তাদের বাণিজ্য এগিয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধ ও সুখী নেপাল’ কর্মসূচি সফলের জন্য বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশ-নেপাল উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ আছে। এই সুযোগ কাজে লাগালে দুই দেশই উপকৃত হবে।

আবদুল হামিদ এসময় উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে সফর বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বলেও জানান প্রেস সচিব।

রাষ্ট্রপতি এসময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য নেপালের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ নেপালের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখছে। গণতন্ত্রের পথে নেপালের শান্তিপূর্ণ অগ্রযাত্রার জন্য নেপালের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনগণকে এসনময় আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

বাংলাদেশে অধ্যয়নরত নেপালের শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আশ্বাস দেন বলে জানান প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সহজ প্রক্রিয়ায় এবং দীর্ঘ মেয়াদের জন্য প্রয়োজনে ৫ বছরের ভিসা দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রপতি এসময় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সম্মানজনকাবে তাদের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে নেপালের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন না হলে তা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হবে।

নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার বলেন, বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো একই ধরনের।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য দু’দেশের মধ্যে কার্যকরী সহযোগিতা প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

একইসঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো কাজে লাগাতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রদীপ গিওয়ালি বলেন, বাংলাদেশ এবং নেপাল উভয় দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

সাক্ষাতের সময় পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান উপস্থিত ছিলেন।