ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে ‘বিচারিক অনুসন্ধানের’ নির্দেশ

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ‘ব্যর্থতার কারণ’ খতিয়ে দেখতে বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2019, 12:45 PM
Updated : 12 Nov 2019, 12:58 PM

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি এই অনুসন্ধান করবে। কমিটির অপর সদস্য হবেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা, যার পদমর্যাদা হবে ন্যূনতম যুগ্ম সচিবের সমান।

এই কমিটি চলতি বছর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশা নির্মূলে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করবে।

মশা নির্মূলে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি এ ধরনের (ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ভয়াবহতার) পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে কী করণীয়, সে বিষয়েও সুপারিশ দেবে কমিটি।   

আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে হাই কোর্টের আদেশে।

কমিটি চাইলে মশা ও মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে কার্যকর ওষুধের ব্যবহার নিরূপণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীট-তত্ত্ব বিভাগ, আইসিডিডিআর বি, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্ল্যান্ট প্রটেকশন উইংয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবে।

এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা বা মতামত দরকার হলে অনুসন্ধান কমিটিকে তা নিতে বলা হয়েছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদন দেখে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক শুরু হলে গত ৪ জুলাই এক স্বতঃপ্রণোদিত আদেশে ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।

এরপর কয়েক দফা এ নিয়ে শুনানি হয়, আদালত বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়।

সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর সরকার, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলে।

সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আদালতে প্রতিবেদন দেয়।

সেসব প্রতিবেদন দেখেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা বা গাফিলতি আছে কিনা তা তদন্তে কমিটি গঠন করে আদেশ দিল আদালত।

এবার বর্ষার শুরুতে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে শিথিলতার অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন মশা মারতে যে ওষুধ দিচ্ছে তা কার্যকর নয় বলে আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় উঠে আসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ৯৮ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২৫১ জনের মৃত্যুর তথ্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে এসেছে। এর মধ্যে ১৭৯ জনের ক্ষেত্রে ডেথ রিভিউ প্রক্রিয়া শেষে ১১২ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।