পূর্বাচলে পানি সরবরাহে চীনা কোম্পানি

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১৬ লাখ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের পানি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ডেলকট ওয়াটার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 04:57 PM
Updated : 11 Nov 2019, 04:57 PM

আগামী তিন বছরের মধ্যে চার ধাপে পূর্বাচলের ৩০টি সেক্টরকে ঘিরে খনন করা হবে ১৫টি গভীর নলকূপ, পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হবে ৩২০ কিলোমিটারের সরবরাহ নেটওয়ার্কা।

প্রকল্প বাস্তবায়নে সোমবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ইউনাইটেড ডেলকট ওয়াটার লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। রাজউকের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ ও ইউনাইটেড ডেলকটের চেয়ারম্যান ফিলিপ ওয়েই জিং ইউ চুক্তিতে সই করেন।

চীনের সাংহাইভিত্তিক প্রকৌশল ও পানি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ডেলকট দীর্ঘদিন ধরে নিজ দেশে আবাসিক, বাণিজ্যিক এলাকায় পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে জিয়াংসু, ঝেজিয়াং, হুবাই, ইনার মঙ্গোলিয়া, হেনান, জিয়াংশি, নিংশিয়া ও শাংছি শহরে একাধিক পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডেলকট।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটি চেয়ারম্যান ফিলিপ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে চীনের ১৬টি শহরে পানি ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। আশা করি, সেই অভিজ্ঞাতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে ভালো কিছু করতে পারবো।”

নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পূর্বাচলের ১৬ লাখ মানুষ নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানি পাবে বলেও আশা করেন তিনি।

রাজউকের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বলেন, “অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নলকূপ খননের কাজ শেষ হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে পূর্বাচলের মানুষের কাছে পানি পৌঁছে যাবে।”

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ পরবর্তী প্রজন্মকে গুণগত উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সরকার এরকম দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ নেয়নি, যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে নিয়েছেন। এ পদক্ষেপ রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।”

রাজউকের আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন এই আবাসন প্রকল্পটি ৩০টি সেক্টরে বিভক্ত যেখানে মোট ভূমির পরিমাণ ৬ হাজার ২২৭ একর। এর পশ্চিমে বালু নদী এবং পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদী।

৩০টি সেক্টরে মোট ২৫ হাজার ১৬টি আবাসিক প্লট রয়েছে যেগুলোর আকার তিন কাঠা থেকে ১০ কাঠার মধ্যে। এছাড়া রয়েছে ১০৩০ বাণিজ্যিক প্লট, ৪৭৩টি প্রশাসনিক প্লট, ৪২৩টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট এবং ১৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্লট।

আবাসন প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। সেখানকার ১৬ লাখ বাসিন্দার জন্য প্রতিদিন ৩৪০ এমএলডি (প্রতিদিন মিলিয়ন লিটার)পানির প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯২ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত তা পরিচালনার দায়িত্বেও থাকবে তারা।

এর ভিতরে ৩২০ কিলোমিটার পনি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হবে। এসব এলাকার পানি প্রবাহ সক্ষমতা হবে ৩৪০ এমএলডি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চার ধাপে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথমে নির্মাণ করা হবে ৪০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন। এই লাইনে পানি চালু হওয়ার পরই দ্বিতীয় ধাপে ১০০ কিলোমিটার, তৃতীয় ধাপে আরও ১০০ কিলোমিটার এবং শেষ ধাপে বাকি ৮০ কিলোমিটার কাজ করা হবে।