‘ক্ষমা চাইতে হবে রাঙ্গাঁকে’- অবস্থানে নূর হোসেনের পরিবার

নূর হোসেনকে ‘মাদকাসক্ত’ বলায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঁঙ্গার বিচারের ভার জনগণের কাছে দিয়েছেন এই শহীদের মা মরিয়ম বিবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 01:52 PM
Updated : 11 Nov 2019, 01:56 PM

রাঙ্গাঁর বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার বিকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে নূর হোসেনের পরিবার।

ওই কর্মসূচিতে মরিয়ম বিবি বলেন, “নূর হোসেন আমার একার ছেলে না, সে জনগণের ছেলে। আপনারা ১০ নভেম্বর পালন করেন। এই জনগণের ছেলেকে সে (রাঙ্গাঁ) নেশাখোর বলেছে।

“যে লোক এই কথা বলেছে, এর বিচার আমি জনগণের কাছে দিলাম। তাকে এর জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”

অশ্রুনয়নে যখন মরিয়ম বিবি একথা বলছিলেন, তখন তার পাশেই ছিলেন নূর হোসেনের তিন ভাই আলী হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও আনোয়ার হোসেন এবং বোন শাহানা বেগম।

আলী হোসেন বলেন, “আমার মা সারাদিন কাঁদছে আজকে, সারাটা রাত, কিছুই বলতে পারিনি। অনেক চিন্তাভাবনা করে রাস্তায় বসছি। আপনারা সবাই আমাকে একটু সহযোগিতা করেন। এই লোকটাকে এর জন্য বিচার করেন আপনারা।”

রাঁঙ্গা তার বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্রেস ক্লাবে অবস্থানে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নূর হোসেনের ভাই।

রোববার রাঙ্গাঁ জাতীয় পার্টির এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাদকাসক্ত নূর হোসেনকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।”

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে হটাতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বামসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মিলিতভাবে ১৯৮৭ সালে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছিল; সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন পরিবহন শ্রমিক নূর হোসেন।

বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে সেদিন মিছিলে নেমেছিলেন আওয়ামী লীগকর্মী নূর হোসেন; সেদিন তার আত্মদান এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দিয়েছিল নতুন মাত্রা।

১৯৮৭ সালে আন্দোলন নতুন মাত্রা পাওয়ার পর তিন বছরের মাথায় গণঅভ্যুত্থানে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হন এরশাদ; যার গড়া দল জাতীয় পার্টিতে এখন মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন রাঙ্গাঁ।

রাঙ্গাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মরিয়ম বিবি বলেন, “আমি আমার ছেলেকে বলেছি, মামলা করা উচিৎ। আমি মামলা করতে রাজি আছি।”

পাশে থাকা বড় ছেলে আলী হোসেন বলেন, “নূর হোসেনের এই ঘটনার জন্য এরশাদ জাতীয় সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদের বাসায় গিয়ে আমার আব্বার কাছে মাফ চেয়েছেন যে আমি ভুল করেছি। আমার আব্বা নেই, আজকে বেঁচে থাকলে হয়ত বলত। কিন্তু এই ধরনের একটা মন্তব্য..তখন কি ইয়াবা ছিল? ফেনসিডিল ছিল?”

তিনি বলেন, “আমি জনগণের কাছে বলতে চাই, এই ছেলেটা আত্মাহুতি দিল দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য। তাঁকে এইভাবে ছোট করাটা কি ঠিক হল? আমরা জনগণের কাছে বিচার দিলাম।”

নূর হোসেনের ভাই আলী হোসেনও অশ্রুনয়নে বলেন, “আমরা তো কিছু চাই না আপনাদের কাছে। আমরা যে অবস্থায় আছি, সে অবস্থায় থাকি। কোনোদিন কারও কাছে হাত পাতি নাই। আমার মা, আমরা, খাই-না খাই, কোনোদিন কাউকে কিছু দিতে বলি নাই।

“আমাদের যারা ভাই আছে, দেখেন, টেস্ট করেন আমাদেরকে। আমরা কোনো অন্যায় কাজ করি কি না। আমরা শ্রমিক মানুষ। কাম করি খাই। সবাই আমরা মেহনতি মানুষ। দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমরা চাই দেশটা সুখে-শান্তিতে থাকুক।”

আলী হোসেন বলেন, “আমরা তো ক্ষমা করেই দিছিলাম, ভুলেই গেছিলাম। কেন সেই জিনিসটাকে আবার জাগাই তুলল? ৩৩ বছর পর আবার নতুন করে ঘাঁ সৃষ্টি করলো কেন? আমরা কি অন্যায় করেছি?”

এই সময় পরিবারের সবাই মিলে বলে উঠে ‘আমরা এই মিথ্যা অপবাদের বিচার চাই’।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে রাঙ্গাঁ গণতন্ত্রের অন্য শহীদদেরও অপমান করেছেন বলে মন্তব্য করেন আলী হোসেন।

“জনগণ তাকে বয়কট করুক। এই ধরনের কথা বলার জন্য এই দেশে তার অধিকার নেই থাকার। তার এমপি পদ কেড়ে নেওয়া হোক। যদি আমরা এর প্রতিবাদ না করি তাহলে তো সে এই ধরনের কথা আরও বলবে।”

রাঙ্গাঁর এই বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিচার দাবি করেন নূর হোসেনের ভাই।