বুলবুলকে ‘রুখে দিল’ প্রকৃতির ঢাল সুন্দরবন

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূল অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ঢাল হিসেবে কাজ করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন।

নিজস্ব প্রতিবেদকও বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2019, 12:04 PM
Updated : 10 Nov 2019, 12:09 PM

আর এর ফলে লোকালয়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির শঙ্কা অনেকটাই কমে এসেছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদ ও বনকর্মীরা । 

বুলবুলের শক্তি যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিল, তখন ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছিল এ ঝড়। তবে উপকূল অতিক্রম করার আগে আগে এর শক্তি কিছুটা কমে আসে।   

ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে শনিবার রাত ৯টায় বুলবুল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে।

এরপর রোববার ভোর ৫টার দিকে এ ঝড় যখন সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলে পৌঁছায়, তখন খুলনার কয়রায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৩ কিলোমিটার ছিল বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুন্দরবন এ ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ কমিয়ে দিয়েছে। খুলনা অঞ্চলে যখন এসেছে, ততক্ষণে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে বাংলাদেশে ততটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সরাসরি এলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হতে পারত।”

ক্রমশ দুর্বল হয়ে বুলবুল স্থল নিম্নচাপে পরিণত হলে রোববার সকালে দেশের তিন সমুদ্রবন্দরকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর।  

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে রূপ ধারণ করে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসছিল, তাতে সুন্দরবন না থাকলে এই দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণহানির আশংকা ছিল। সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে রুখে দিয়েছে।

সাম্প্রতিক অতীতে ২০০৯ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলা এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সিডরও স্থলভাগে উঠে এসেছিল সুন্দরবন উপকূল দিয়ে। এর মধ্যে আইলায় বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার। আর সিডরের শক্তি ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি, ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার।

দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকাগুলোর মানুষদের জীবনে 'সিডর' এক দুঃসহ স্মৃতির নাম। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর।

প্রলয়ঙ্করী সিডরে মৃত্যু হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের। কিন্তু আরও বহু মানুষ বেঁচে যায় সুন্দরবনের কারণে। এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেই ঝড়ে, ভেঙে পড়ে হাজার হাজার গাছপালা।

বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মঈন উদ্দিন খান বলেন, এবার বুলবুলের কারণে সুন্দরবনের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি বলেই তারা আশা করছেন।

“বনের ভেতরে নদীপাড়ে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বন্যপ্রাণী মারা পড়ল কি না, বনের আরও ভেতরে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। বন বিভাগের কর্মীরা সরেজমিনে কাজ করতে শুরু করেছেন আজ দুপুর নাগাদ। সোমবার থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা জানাতে পারব। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ক্ষতি খুব বেশি হয়নি।”

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সুন্দরবন সবুজ বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে। এর ওপর অনেক অত্যাচার হয়। এখানে আরো গাছ লাগিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

আরও খবর