ঘূর্ণিঝড় বুলবুল: দক্ষিণের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে দক্ষিণের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লাখ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2019, 08:37 AM
Updated : 11 Nov 2019, 08:05 AM

শনিবার রাত থেকে ঝড়ের কারণে খুলনার বিভিন্ন জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সকাল নাগাদ শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ ফিরে এলেও উপশহর ও গ্রামাঞ্চলের অনেক এলাকা প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎহীন আছে।

ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯টায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। রোববার ভোর ৫টার দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছায়; শক্তি হারিয়ে সকালে বুলবুল পরিণত হয় গভীর স্থল নিম্নচাপে।

ঝড়ে উপকূলীয় জেলাগুলোর অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উপড়ে গেছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি; ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের ক্ষেত।

মোংলায় অবস্থানরত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি রিয়াসাদ সানভী জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোংলা বন্দর এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। মোংলা থেকে পশুর নদী অপর পাশে খুলনার দাকোপ যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেছেন তিনি।

দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নে শনিবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত সেখানে বিদ্যুৎ ফেরেনি।  

খুলনা বিভাগের শহরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ফরিদপুর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকায় শনিবার রাত ৩টার দিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে সকাল ১০টা নাগাদ শহরাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবার চালু করা সম্ভব হয়েছে।

 

“বরিশাল বিভাগে দুপুর পর্যন্ত ঝড় চলছিল। ঝড়ের বাতাসে লাইন ট্রিপ করেছে। ঝড়ে লাইনের ওপরে তার পড়েছে, খুঁটি ‍উপড়ে গেছে। আবার অনেক এলাকায় খুঁটি হেলে পড়েছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে সাতক্ষীরা জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে শহর এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে এলেও দুপুর পর্যন্ত শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।

কিছু কিছু এলাকায় ঝড়ের কারণে গাছ পড়ে ও খুঁটি হেলে গিয়ে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে বলে বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একজন পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুলবুলের আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তাদের ১৩টি বিতরণ সমিতির মধ্যে কোনোটির কার্যক্রম সম্পূর্ণ, কোনোটির আংশিক ব্যাহত হয়েছে। ঝড়ে আক্রান্ত এলাকার ৩২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছেন বলে তারা খবর পেয়েছেন।

“আক্রান্ত এলাকায় ৬০ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর সঠিক হিসাব নিরূপণ করা যায়নি। লাইন মেরামতের কাজে যুক্ত আছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী।”