শক্তি কমে ‘বুলবুল’ এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হেনে কিছুটা দুর্বল হয়ে অতি প্রবল থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে ‘বুলবুল’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2019, 02:44 PM
Updated : 9 Nov 2019, 10:17 PM

ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার থেকে ১২৫ কিলোমিটার বাতাসের গতি নিয়ে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ৯টায় পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ রাত সাড়ে ১০টায় জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বুলবুল পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে আরও ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগতে পারে।

বুলবুলের প্রভাবে ভারতের ওড়িশা ও কলকাতায় ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় বহু গাছ উপড়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে অন্তত দুজনের।

ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাসার্ধ ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। ঝড়টি ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার গতিতে উত্তরপূর্ব দিকে এগোচ্ছে।

মধ্যরাত নাগাদ ঝড়টি বাংলাদেশে ঢুকবে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন।

রাত ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আয়েশা খাতুন বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম এলাকায় অবস্থান করছে।

“ঘূর্ণিঝড়টি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে। মধ্যরাত নাগাদ সুন্দরবনের নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।”

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শনিবার সারা দিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার রাত ৮টার পর প্রায় ঘণ্টা দুয়েক মংলায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারি বৃষ্টি হয়।

মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সুন্দবনের দুবলার চরে সন্ধ্যার দিকে প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

মোংলার সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলো থেকে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঘূর্ণিঝড়টি যখন বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাবে, তখন জোয়ার থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। এতে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে আয়েশা খাতুন জানিয়েছেন। মংলার মাঝিরাও এই শঙ্কা করছেন।

ঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে মোংলা, চট্টগ্রামসহ সব সমুদ্রবন্দরে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলেছে অভ্যন্তরীণ নৌপ‌রিবহন কর্তৃপ‌ক্ষ।

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ২১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাহাদাৎ হোসেন জানিয়েছেন।

শুক্রবার রাত থেকে এ কার্যক্রম চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের টার্গেট ছিল ১৮ লাখ লোক সরাতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতায় লোকজন নিরাপদে এসেছে, কাউকে জোর করা হচ্ছে না।

“প্রায় ২১ লাখ লোককে আশ্রয় কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নানা স্থাপনায় নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে।”

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলা জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করে প্রস্তুতি সাজানো হয়েছে।

বলার পরও যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন না, তাদের নিতে বাধ্য করতে পুলিশ নামানো হয়েছে বলে জানান পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে উদ্ধার ও জরুরি ত্রাণ তৎপরতার জন্য। পাশাপাশি উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ২০০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকে এবং ২২টি কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচার করছে।

উপকূলীয় ১৩ জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব জেলার সব কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা গঠন করেছে ১ হাজার ৫৭৭টি মেডিকেল টিম।

ঝড় এগিয়ে আসায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল শনিবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। শনিবার আরেক ঘোষণায় সোমবারের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শনিবারের সব পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে তা পরে জানানো হবে।