গত ৩০ অক্টোবর বিকেলে মনিপুর স্কুলের রূপনগর শাখার বিপরীত দিকে ১১ নম্বর সড়কে শিয়ালবাড়ি বস্তির পাশে তারই গ্যাসবেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সাত শিশুর মৃত্যু হয়, আহত হয় অন্তত ২০ জন। সেদিন থেকেই হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন আহত সাঈদ।
বিস্ফোরণের ঘটনায় রূপনগর থানায় যে মামলা হয়েছে, তার একমাত্র আসামি এই বেলুন বিক্রেতা, বিস্ফোরকদ্রব্য আইন বা গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহারবিধি নিয়ে যার কোনো ধারণাই নেই।
ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল মনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো, তবে এক হাতে সমস্যা আছে। আপাতত তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”
এই বিপদে আবু সাঈদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের প্রতিবেশী আবু জাহিদ। বৃহস্পতিবার হাসপাতালে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবার অপারেশন হবে সাঈদের। ডাক্তার বলেছে, বাঁ হাতের আঙুল কেটে বাদ দিতে হবে।”
চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, “এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ব্যান্ডেজ করাতেও পাঁচশ টাকা নেয়।”
সেদিনের ঘটনার বর্ননা দিয়ে জুয়েল বলেন, “আমি বাচ্চার জন্য বেলুন কিনতে গেলাম, তারপর বেলুনওয়ালা বললো তার কাছে গ্যাস নাই। বলেই সে তার সিলিন্ডারে ছাইয়ের মত কি জানি একটা দিল। আমিও দাঁড়ায়ে দেখতে লাগলাম, তারপর হঠাৎ বিস্ফোরণ হল।”
এই কষ্টের মধ্যেও সান্ত্বনা খুঁজে তিনি বলেন, “ভাগ্যিস আমার বাচ্চাগুলা আমার সাথে ছিল না। নিজের কষ্ট সহ্য করতে পারতেছি, কিন্তু ওদের কিছু হইলে বাঁচতাম না।”
ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের পাশেই বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৫ বছর বয়সী জান্নাত বেগম। পেশায় গৃহকর্মী এই নারী সেদিন বিস্ফোরণে হারিয়েছেন তার ডান হাত।
তার স্বামী রিকশাচালক মো. নজরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেদিন বিকালে জান্নাত বাজার করতে যাচ্ছিলেন। পাশেই ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণে ওই জায়গাতেই তার ডান হাত শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়।
“এখানে চিকিৎসা চলছে। মঙ্গলবার বিকালে ইমার্জেন্সি থেকে এইখানে (বার্ন ইউনিট) ট্রান্সফার করেছে। অপারেশন লাগবে কিনা ডাক্তার কিছু বলে নাই। তবে রোজ এসে দেখে যায়। ওষুধ আর ইনজেকশন দিচ্ছে প্রতিদিন।”
ওই বিস্ফোরণে এক চোখ হারানো ছয় বছরেরর মো. মোস্তাকিনের চিকিৎসা চলছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। রূপনগরের ৯ নম্বর রোড মডেল স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত সে।
মোস্তাকিনের বাবা মফিজুরের রহমান কাজ করেন একটি প্লাস্টিক কারখানায়। তিনি টেলিফোনে জানান, তার ছেলের ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ডান পা ভেঙে গিয়েছে, পুড়ে গেছে শরীরের অনেকটা অংশ। শনিবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা।
তার বাবা রিকশা গ্যারেজের শ্রমিক মো. সুলতান জানান, জনির মুখের অনেকটা অংশ পুড়েও গেছে। তিন দিন সে অচেতন ছিল।
মন্ত্রণালয়ের চার সুপারিশ
রূপনগর বিস্ফোরণের পর এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সরকারের কাছে চার দফা সুপারিশ করেছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর ।
বৃহস্পতিবার পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. সামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ঘটনা তদন্ত করে বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে । হাইড্রোজেন ভর্তি বেলুন নিষিদ্ধেও সুপারিশ করেছি আমরা ।”
এ কর্মকর্তা জানান, বেলুনের জন্য কস্টিক সোডা ও এলুমিনিয়াম পাউডার নিয়ে হাইড্রোজন গ্যাসের রিঅ্যাক্টর বানায় এক শ্রেণির হকার। এ ধরনের একটি সিলিন্ডারই রূপনগরে বিস্ফোরিত হয়েছে।
পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- শিশু কিশোরদের জন্য হাইড্রোজেন বেলুন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অভিভাবকদের সতর্ক করতে হবে ।
হাইড্রোজেন বেলুন বিক্রেতাদের পেলেই থানায় সোপর্দ করতে হবে।
হাইড্রোজেন বেলুন নিষিদ্ধ করা যায় কিনা- সেটাও দেখার সুপারিশ করেছে পরিদপ্তর।
আরও খবর-