ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিমুখ সুন্দরবনের দিকে, ৪ নম্বর সংকেত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ঘণ্টায় সোয়াশ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে, আপাতত এর গতিমুখ সুন্দরবনের দিকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2019, 07:53 AM
Updated : 8 Nov 2019, 12:15 PM

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলছেন, শনিবার বিকালের পর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের প্রভাব অনুভূত হতে পারে। মধ্যরাতে খুলনা অঞ্চল দিয়ে বুলবুল উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

বুলবুল আরও শক্তি সঞ্চয় করে শুক্রবার সকালে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর সংকেত বাড়িয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অধিকাংশ এলাকায় বিরাজ করছে মেঘলা আবহাওয়া, কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ির বৃষ্টিও হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর ও জেটিতে দুপুর পর্যন্ত পণ্য খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও সংকেত বাড়লে নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন।

শুক্রবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল এ ঝড়।

বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

তবে ভারতের আবহাওয়া অফিস সকাল সাড়ে ৮টার বুলেটিনে বলেছে, তখন বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড় মাতমো গত অক্টোবরের শেষে ভিয়েতনাম হয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। সেই ঘূর্ণিবায়ুর অবশিষ্টাংশই ইন্দোনেশিয়া পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে এসে আবার নিম্নচাপের রূপ নেয়।

বার বার দিক বদলে নিম্নচাপটি আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে  বুধবার রাতে তা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। তখন এর নাম দেওয়া হয় বুলবুল।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তরের নির্ধারিত তালিকা থেকে ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। বুলবুল নামটি নেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে। 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টি ঝরবে ভারতের ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়। তবে উপকূলে আঘাত হানার আগে কিছুটা কমে আসতে পারে এ ঝড়ের শক্তি।

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মোটামুটি ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত এ ঝড় শক্তি সঞ্চয় করতে থাকবে।  

এরপর সামান্য বাঁক নিয়ে উত্তরমুখী হয়ে এগোবে শনিবার সকাল পর্যন্ত। তারপর আরও বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার প্রথম প্রহরে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ আর বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝ দিয়ে সুন্দরবন অঞ্চল হয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

তখন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা গতিবেগ হতে পারে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বুলেটিনেও মোটামুটি একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।