বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে অসুস্থ, অস্বচ্ছল ও বিভিন্ন দু্র্ঘটনায় হতাহত সাংবাদিকদের পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের প্রমাণ করতে হবে। যদি কেউ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়..প্রত্যেকে যারা অভিযোগ নিয়ে আসছে, যারা বক্তৃতা দিচ্ছে..আমি বলেছি সমস্ত ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে।
“যদি দুর্নীতি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দুর্নীতি করলে যে শাস্তি, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তার যে শাস্তি হত, যে অভিযোগকারী সে যদি ব্যর্থ হয় প্রমাণ করতে, তাকে কিন্তু সেই সাজা পেতে হবে। এটা কিন্তু আইনে আছে। মিথ্যা অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে কিন্তু আইন ব্যবস্থা নেবে। সেই ব্যবস্থা কিন্তু আমরা নেব। আপনাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম।”
দিনের পর দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা বরদাশত করা হবে না বলেও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নকাজ শুরু হলেই আন্দোলন কেন এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব থেকে যেটা লক্ষ্যনীয়, যখন উন্নয়নের কোনো কাজ দেওয়া হয়, যখনই সেখানে একটা প্রজেক্ট দেওয়া হয়, তখনই এই আন্দোলন যেন আরও ঘনীভূত হয়ে উঠে। কেন? তাহলে যারা আন্দোলন করেন তাদেরও ভাগ-বাটোয়ারার ব্যাপার আছে, নাকি ভাগে কম পড়ছে, আমার প্রশ্ন সেখানেও আছে।
“আমি জানি আমি খুব রূঢ় হচ্ছি কিন্তু বাস্তবে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটা কি ধরনের কথা? হয়ত প্রজেক্ট পাস হয়ে গেছে টাকাও ছাড় হয়নি। তার আগেই দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলন, কি কারণে? কার ভাগে কম পড়ল যে এই আন্দোলন?”
“এখানে কি কোনো ডিসিপ্নিন থাকবে না? কোনো আইন থাকবে না? আইন প্রয়োগ হবে না? আর আমাদের কিছু কিছু আছে..এটাকে আরও উস্কানি দেয়। এই বিষয়গুলো মনে হয় একটু দেখা দরকার আপনাদের।”
তিনি বলেন, “আমি হঠাৎ দেখছি কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা নাই বার্তা নাই ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন। ভিসিকে দুর্নীতিবাজ বলছে। আমার স্পষ্ট কথা যারা দুনীতির অভিযোগ আনছে তাদেরকে কিন্তু এই অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে এবং তাদেরকে তথ্য দিতে হবে। তারা যদি তথ্য দিতে পারে নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা নেব।”
“কিন্তু তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারবে না। ওই দুর্নীতি দুর্নীতি করে ক্লাসের সময় নষ্ট করবে। ক্লাস চলতে দেবে না, ইউনিভার্সিটি চলতে দেবে না। আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, অফিসে আক্রমণ, ভাংচুর..নানা ধরনের। এটাও তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।”
আবরার ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পরও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়েও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বুয়েটের সমস্যাটা কি সেটা তো বুঝতে পারছি না। আমরা তো সবই করলাম। তারপরও এই আন্দোলন কিসের জন্য? বুয়েটে যে আবরার হত্যা ঘটল, আমরা সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। সকলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছাত্ররা আন্দোলনের আগেই যখনই খবর এসেছে তখনই কিন্তু আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। এখন তাহলে আন্দোলন কিসের জন্য, আমার সেটাই প্রশ্ন।
“দিনের পর দিন ক্লাস করতে দেবে না, নিজেরা ক্লাস করবে না। তাহলে তারা ইউনিভার্সিটিতে থাকবে কেন? এই ধরনের কাজ যারা করবে সাথে সাথে তাদের এক্সপেল করে দেওয়া উচিত। তারা কিসের জন্য এভাবে করবে?”
একাত্তর এবং পরবর্তী সময়ে অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনাগুলো সাংবাদিকদের তুলে আনার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,“বহু নির্যাতনের কাহিনী সারা গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আপনারা যদি কিছু অন্তত ব্যবস্থা নেন যে এই কাহিনীগুলো..আর যেখানে যেখানে গণহত্যা হয়েছে..সব নাম তো এখন পাওয়া যাবে না। অনেকেই হারিয়ে গেছে। তারপরও যতটুকু পাওয়া যায় সেগুলো আমার মনে হয় খুঁজে খুঁজে বের করা দরকার।”
২০০১ সালে একাত্তরেরর ঘটনারে ‘পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল’ জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের পর ঠিক একই কায়দায় এই অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ কিন্তু হয়। তখন অনেকেই সাহস করে বলেনি।
“আমি মনে করি, এই সব ঘটনার তথ্য আপনাদের সংগ্রহ করা উচিত, এগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা উচিত, প্রকাশ করা উচিত। যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা কখনও না ঘটে। যারা এই সমস্ত ঘটনায় জড়িত তাদের মুখোশটা উন্মোচন করা উচিৎ।”