সাজা বেড়েছে, এখন আইন মানবে সবাই: ডিএমপি কমিশনার

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সাজার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন আইন মানবে বলে আশা করছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ‍মুহা. শফিকুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2019, 12:26 PM
Updated : 4 Nov 2019, 12:39 PM

নতুন আইন বাস্তবায়নে পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন আইন প্রয়োগ করা শুরু হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কেউ আইন ভঙ্গ করলে কিংবা বেআইনি সুবিধা নিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপি কমিশনার।

ঢাকার সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী প্রাণ হারানোর পর গত বছর শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের পর শাস্তির বিধান কঠোর করে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন হয়, যা কার্যকর হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে।

এই আইনে নতুন বিভিন্ন বিধান যোগ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শফিকুল বলেন, “সাজার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ সাজার ভয়ে হলেও আইন মানবে বলে আমরা মনে করি।”

ঢাকার সড়কে বিশৃঙ্খলা কমাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা খুব-একটা কাজে দেয়নি।

নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা হবে। কিছু কিছু অপরাধের কারণে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারেরর বিধান রয়েছে এই আইনে।

মাথার উপরে ফুটব্রিজ রেখেই সড়ক বিভাজক টপকে রাস্তা পারপার। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

উন্নত দেশগুলোর মতো এই আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে পয়েন্ট পদ্ধতি রয়েছে। আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কমতে থাকবে। এক পর্যায়ে পয়েন্ট শেষ হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারাত্মক আহত ও নিহত হলে থানায় মামলা হবে। ড্রাইভারের পয়েন্ট কর্তনের বিষয় সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে, এতে বোঝা যাবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের কত পয়েন্ট কর্তন হয়েছে।

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইনে অপরাধের দায়ে কাউকে জরিমানা করা হলে সেক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ আছে।

“জরিমানার ক্ষেত্রে আমরা একটি পদক্ষেপ নেব যে প্রথমবার কেউ অপরাধ করলে তাকে সহনীয় পর্যায়ে জরিমানা করা হবে।  তাকে বলা হবে, এই অপরাধে তার এত সাজা ছিল, ভবিষ্যতে একই অপরাধ করলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।”

পথচারী পারাপারের বিষয়ে কমিশনার বলেন, “ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার না হয়ে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হলে জরিমানা করা হবে। যেখানে জেব্রা ক্রসিং আছে, সেখানে রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ সাহায্য করবে।”

“আমরা মনে করি, এই আইনটি বাস্তবায়ন হলে ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরে পাবে,” বলেন তিনি।

সড়কে অধিকাংশ মোটর সাইকেল আরোহী মাথায় হেলমেট পরলেও ট্রাফিক পুলিশের অনেককে তা না পরেই চলতে দেখা যায়।

এনিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বচ্ছ থাকবে। আমরা পুলিশের সবাইকে বলে দিয়েছি, ট্রাফিকের লোকজন যদি আইন অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।”

এক সাংবাদিক বলেন, নতুন আইনে সর্বোচ্চ সাজা নির্দিষ্ট থাকলেও সর্বনিম্ন সাজা নির্দিষ্ট করা নেই বলে আইন অমান্যকারীর সঙ্গে ব্যক্তিগত খাতির সৃষ্টি হতে পারে আইন বাস্তবায়নকারী পুলিশ সদস্যের।

হেলমেট না পরেই বাইকের পেছনে পুলিশ সদস্য। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

তখন শফিকুল বলেন, “কোনো কর্মকর্তা যদি মামলা না দিয়ে অন্য কোনোভাবে সুবিধা নিতে চায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সার্জেন্টের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা বন্ধ থাকলে বুঝে নেব, অবৈধ কাজের জন্য ক্যামেরা বন্ধ ছিল।”

ঢাকায় এখন ট্রাফিক সার্জেন্টরা পস মেশিনের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করলেও নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণ ভিন্ন হওয়ায় তা আর কার্যকর থাকবে না।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “নতুন আইনের জন্য পস মেশিন সফটওয়্যার আপডেটের কাজ চলছে। এ কারণে এখন কেস স্লিপের মাধ্যমে মামলা দেওয়া হবে। পস মেশিন আপডেট শেষ হলে কেস স্লিপের মাধ্যমে মামলা দেওয়া হবে না।”

নতুন আইন বাস্তবায়নের জন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সচেতন করে তোলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রায় আটশ  সার্জেন্ট ও টিআইকে নতুন আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

“তাদেরকে নতুন আইনের বই দেওয়া হয়েছে। একমাস পরে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের যাচাই করা হবে।”

আইন প্রয়োগের আগে জনসাধারণকে সচেতন করার কথাও বলেন শফিকুল।

এজন্য বাস টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মাইকিং, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে প্রচারপত্র বিলি, গণমাধ্যমে প্রচারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি।