তবে বিচারিক আদালতে মামলাটি ৪০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে আদালত।
এই সময়ের মধ্যে প্রসিকিউশনের কারণে মামলা নিষ্পত্তি না হলে তখন পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন বিবেচনা করতে বলা হয়েছে হাই কোর্টের আদেশে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ ও রানা কাওসার। আর জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন; যিনি ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন।
ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করলে সোনাগাজীর তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তার জবানবন্দি নিয়েছিলেন।
তার কয়েক দিন পর মাদ্রাসার ছাদে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন নুসরাতের ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আর নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় ওই মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে গত ২৪ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দেয় ফেনীর নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে শুনানির জন্য ইতোমধ্যে হাই কোর্টে এসেছে।
রোববার ওসি মোয়াজ্জেমকে নিয়ে হাই কোর্টের আদেশের পর আইনজীবী সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওসি মোয়াজ্জেম সে সময় যদি ঠিকমত ব্যবস্থা নিতেন তাহলে হয়ত এ ঘটনাটি ঘটত না। যে ১৬ জনের ফাঁসি হয়েছে তারা হয়ত তখন এ অপরাধটা করতে পারত না।”
সুমন বলেন, “হত্যা মামলায় কারো কারো ফাঁসি হয়েছে থানা ম্যানেজ করার কারণে। তারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন থানা ম্যানেজ করার। থানা ম্যানেজ করার কারণে যদি ফাঁসির আদেশ হয়, তাহলে যিনি ম্যানেজ হয়েছেন তার তো কিছু হইলো না। আজ এ বক্তব্য আদালতে তুলে ধরার পর আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে আদেশ দিয়েছেন।”
আদালত ৪০ কার্যদিবসের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে জানিয়ে সুমন বলেন, “যদি প্রসিকিউশনের কারণে (যেমন- সময় নেওয়া বা সাক্ষী হাজির করতে না পারা) এই সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি না হয়, তবে ওসি মোয়াজ্জেম যদি জামিন আবেদন করেন তাহলে তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।”
আইনজীবী সৈযয়দ সায়েদুল হক সুমন গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে মামলা করার পর বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে।
তদন্ত করে পিবিআই জানায়, নুসরাতের জবানবন্দি ভিডিও করে ওসি মোয়াজ্জেম যে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন, তদন্তে সেই প্রমাণ মিলেছে।
এই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে গত ১৬ জুন গোপনে হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম। আদালত পরদিন অর্থাৎ ১৭ জুন আবেদনটি শুনানির জন্য রাখলেও ওই দিনই সুপ্রিম কোর্ট এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
মোয়াজ্জেমকে ১৭ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ওই দিন আদালত তার জমিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন না পেয়ে ৩১ জুলাই হাই কোর্টে আপিল করে জামিন চান মোয়াজ্জেম। এরপর ২৭ অগাস্ট হাই কোর্ট ওসি মোয়াজ্জেমের করা আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে ১৩ অক্টোবর শুনানির জন্য রাখে।
সেই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ অক্টোবর জামিন শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি রোববার আদেশের জন্য রেখেছিল।