কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে আবরারের মৃত্যু তদন্তে রেসিডেন্সিয়ালের কমিটি

কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করেছে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2019, 08:24 AM
Updated : 2 Nov 2019, 01:03 PM

শুক্রবার বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর একটি অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার (১৫)।

এ ঘটনায় আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে শিক্ষার্থীরা বলছে, সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণেই আবরারকে মারা যেতে হয়েছে।

শনিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দিতে আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোর কাছে দাবি করে।

শিক্ষার্থীরা কলেজের পশ্চিম ফটকে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে থাকা এক ছাত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুক্রবারে আয়োজন যারা করেছেন, তারা নিজেদের দায় কতটুকু, তা তাদের প্রচার মাধ্যমে না জানালে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

“তারা কেন আমাদের না জানিয়ে অনুষ্ঠান চালিয়ে গেল, পাশে হাসপাতাল থাকতে মহাখালীতে কেন নিয়ে গেল, মধ্যরাতে কেন জানাজা হল,” বলেন এই শিক্ষার্থী।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে কলেজটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ সেখানে উপস্থিত হন। তিনি ছাত্রদের নিজের শোকানুভূতির কথা জানিয়ে বলেন, এই কলেজের সাবেক ছাত্র হিসেবে এবং অধ্যক্ষ হিসেবে তার বড় দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে আশ্বস্ত করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্ত হন।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

অধ্যক্ষ শামীম ফরহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”

তদন্ত কমিটি গঠনের পর ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে একজন শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

ওই শিক্ষক বলেন, “কমিটির সদস্যরা কিশোর আলো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের ব্যাখ্যাও চাইবে। কোথায় এবং কার ত্রুটি ছিল, তা খতিয়ে দেখে সুপারিশ করবে কমিটি।”

কলেজের দিবা শাখার ছাত্র আবরারের বাড়ি নোয়াখালী। ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।

পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদপুর থানার ওসি জিজি বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ‘কি আনন্দ’ শিরোনামেও ওই অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আবরার। আয়োজকরা তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নাঈমুল আবরার

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একজন শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আয়োজকরা তাকে কাছের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওই অনুষ্ঠান আয়োজনের অংশীদার ছিল বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে কিশোর আলোর অনুষ্ঠান দেখতে এসে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল কলেজের ক্লাস নাইনের ছাত্র নাইমুল আবরার বিদ্যুতায়িত হয়। ওখানেই জরুরি মেডিক্যাল ক্যাম্পে তাকে নেয়া হয়। দুজন এফসিপিএস ডাক্তার দেখেন। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে বলেন। হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

এদিকে আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে রোববার ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংবাদপত্রটির কার্যালয় ঘেরাও করতে একটি ফেইসবুক ইভেন্ট খোলা হয়েছে।