ঢাকায় বিদ্যুতের খুঁটি থেকে অন্য সেবার তার সরছে ডিসেম্বর থেকে

ঢাকা শহরে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ঝুলে থাকা সব সেবা সংস্থার অবৈধ তার কেটে দিয়ে তা অপসারণের কাজ ডিসেম্বর থেকে হতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2019, 05:28 PM
Updated : 31 Oct 2019, 05:28 PM

রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঝুলন্ত তার ও বিতরণ লাইনকে ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন ব্যবস্থার আওতায় আনার বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ পরিকল্পনার কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া বিভিন্ন সেবা সংস্থার অবৈধ তারকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ‘একটি বড় বাধা’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই সব ঝুলন্ত তার অচিরেই অপসারণ করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দ্রুত ঝুলন্ত তার অপসারণ করা প্রয়োজন। বিদ্যুতের পোলে তার ঝুলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে ঝুঁকিতে রেখে কোয়াব বা আইএসপিএ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে, যা সার্বিকভাবে অনভিপ্রেত।

“আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে বিদ্যুতের পোলে যত অবৈধ লাইন আছে তা কেটে দেওয়া হবে। সেগুলো আমরা অপসারণ করব।”

বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, টেলিফোন লাইন ও ডিশ লাইনের তার বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে বেঁধে বাড়ি বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নসরুল হামিদ বলেন, “নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) আওতাধীন অপারেটরদের ভূগর্ভস্থ লাইন করে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার কথা। কেবল অপারেটরদেরও এ অবকাঠামো ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু তা না করে বিদ্যুতের পোল ব্যবহার করছে।”

তিনি বলেন, “আমরা তথ্য ও বিনোদন ব্যবস্থাকে সমন্বিতভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে নয়।”

ঢাকা মহানগরীর যে সব এলাকায় লোকাল ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট (এলডিপি) ব্যবস্থা রয়েছে সেসব এলাকায় জিপিএস ম্যাপসহ তালিকা প্রস্তুত, যেসব এলাকায় এখনো আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইবার অপটিক কেবল সুবিধা তৈরি হয়নি সেসব এলাকায় কর্মপরিকল্পনাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্মসচিবকে (সুশাসন ও কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা) পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।

আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এই সভায় আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এস এম জিয়াউল আলম, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনসহ বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, গৃহায়ণ  ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি, ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, জননিরাপত্তা বিভাগ ও পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তারের জঞ্জাল থেকে রাজধানীকে মুক্ত করতে ২০০৯ সালে অন্য সব তার সরিয়ে মাটির নিচে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ঝুলন্ত তার অপসারণে ২০১০ সালে একবার উদ্যোগও নেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। সে সময় সব পক্ষকে নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক হলেও কোনো ফল আসেনি।

কেবল টিভি, ইন্টারনেট সার্ভিস, টেলিফোন লাইন আর বিদ্যুতের লাইন মিলিয়ে ঢাকার প্রায় সব রাস্তার পাশেই মাথার ওপর এখন তারের জঞ্জাল। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা এসব তার ছিঁড়ে সমস্যা তৈরি হয় বিভিন্ন সময়ে। এসব তার কখনও কখনও অগ্নিকাণ্ডেরও কারণ ঘটায়।

উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সঙ্গে ইন্টারনেট, টেলিফোন ও কেবল টিভি নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সংস্থার এই সব তার অপসারণে আদালতের নির্দেশ থাকলেও তা মানছে না কোনো সংস্থা।

গত মাসে ডিপিডিসির এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, ঢাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে প্রচলিত খুঁটি অপসারণে চীনের অর্থায়নে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডিপিডিসি। পর্যায়ক্রমে ঢাকার আরেক বিদ্যুৎ বিপণন সংস্থা ডেসকোও একই ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।