৪ বছর গড়ালেও শুরু হয়নি দীপন হত্যার বিচার

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের পর চার বছর গড়ালেও এখনও শুরু হয়নি বিচার।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাস আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2019, 05:03 PM
Updated : 31 Oct 2019, 07:18 PM

এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশ ও প্রসিকিউটরদের গাফিলতিকে দায়ী করছে তার পরিবার।

বৃহস্পতিবার ঢাকার নিউ এলিফ্যান্ট রোডে বইঘর ‘দীপনপুর’ এ দীপনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয়।

তার আগে দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের মামলার বিচার দ্রুত শেষ হওয়া উচিৎ, কিন্তু দেরি হচ্ছে।”

দীপন হত্যাকাণ্ডের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার এক বছর পর হয়েছে অভিযোগ গঠন। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল, সম্পত্তি ক্রোকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ নানা বিষয়ে দেরিই এর কারণ বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।

ঢাকার সন্ত্রাস দমন বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান গত ১৩ অক্টোবর এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ১৮ নভেম্বর দিন ঠিক করে দেন।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, “যেহেতু মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তৈরি হয়ে গেছে, তাই দ্রুত এই মামলার বিচার শেষ করা সম্ভব হবে।”

মামলার আসামিরা হলেন- জঙ্গি নেতা সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের।

তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে পুলিশের ভাষ্য। আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

ফয়সল আরেফিন দীপন

লেখক-প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর ধারাবাহিক হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে আক্রান্ত হন দীপন। তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

একই দিন রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হানা দেয় দুর্বৃত্ত দল। তারা প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসুকে কুপিয়ে আহত করার পর বাইরে তালা মেরে চলে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে ঢুকে তাদের উদ্ধার করে, টুটুলসহ তিনজনই বেঁচে যান।

তার আগে ওই বছরই বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা চলার সময় টিএসসিতে কুপিয়ে হত‌্যা করা হয় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। জাগৃতি ও শুদ্ধস্বর দুই প্রকাশনা থেকেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিতের বই প্রকাশিত হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই জঙ্গি দলের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই দীপনকে হত্যা করা হয়।

দীপন হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন।

মামলার তদন্ত শুরুর পর দফায় দফায় প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানোয় হতাশা প্রকাশ করেছিল দীপনের পরিবার।

এর ব্যাখ্যায় গত বছর দীপন হত্যামামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করার পর পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করায় এবং কোনো সূত্র না থাকায় (ক্লুলেস) তদন্তে লম্বা সময় লেগেছে।

দীর্ঘ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান গত বছরের ১৫ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।  এরপর এই বছরের ১৩ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়।

আরও খবর