সেলিম প্রধান-লোকমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের অন্যতম পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও অনলাইন জুয়ার কারবারি সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2019, 10:19 AM
Updated : 27 Oct 2019, 10:19 AM

রোববার আলাদা আলাদা মামলায় লোকমানের বিরুদ্ধে চার কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকা এবং সেলিমের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। আর সেলিমের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক লোকমানের বিরুদ্ধে করার মামলার এজাহারে বলা হয়, ৬৪ লাখ ২০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তির হিসাব আয়কর নথিতে দেখালেও সেক্ষেত্রে ’সুনির্দিষ্ট কোনো বৈধ আয়ের উৎস’ পাওয়া যায়নি।

এজাহারে বলা হয়, আসামি লোকমান হোসেন ভূঁইয়া তার আয়কর নথিতে ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ ছাড়াও তার নিজ নামে ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সাথে যৌথভাবে আরও দুই কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। কিন্তু তা তাদের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি।

সেলিমের প্রধানের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে সর্বমোট ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণভাবে অর্জন করেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এতে আরো বলা হয়, অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন গোপন সূত্র থেকে জানা গেছে, সেলিম প্রধান তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দ্বারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে একাধিক প্লট, বাড়ি ও ফ্ল্যাট অর্জন করাসহ দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে জুয়াবিরোধী অভিযান শুরুর ধারাবাহিকতায় ওই মাসের শেষদিকে মতিঝিল এলাকায় মোহামেডান ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুটো রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।

এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর তেজগাঁওয়ের মনিপুরীপাড়ার বাসা থেকে লোকমানকে কয়েক বোতল মদসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে।

লোকমানকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব দাবি করেছিল, লোকমানই মোহামেডান ক্লাবের ঘরগুলো দেড় বছর আগে ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন।

ওই সময় র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেছিলেন, গত প্রায় দেড় বছর ধরে লোকমান প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন ক্যাসিনোর আয় থেকে। পরে তা ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা করা হয়। মাসে তার আসতো ২১ লাখ টাকা।

লোকমানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তার ভাষ্য ছিল, এইচএসবিসি ব্যাংকে লোকমানের এক কোটি টাকার এফডিআর আছে। অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ও কমনওয়েলথ ব্যাংক ছাড়াও দেশের কয়েকটি ব্যাংকে তার গচ্ছিত টাকার পরিমাণ প্রায় ৪১ কোটি টাকা।

অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করা ছেলেকে নিয়মিত ওই দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান লোকমান। র‌্যাবের ধারণা, প্রতিদিন যে ৭০ হাজার টাকার কথা লোকমান বলেছেন, তার বাইরেও জুয়ার আড্ডা থেকে তার আরও টাকা আসতো। এর একটি বড় অংশ তিনে দেশের বাইরে পাঠাতেন।

অন্যদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র‌্যাব-১। এরপর তার গুলশান, বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।

সেখান থেকে সাতটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া জব্দ করার পাশাপাশি সেলিমের কর্মচারী আক্তারুজ্জামান ও রোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় ওই দিনই সেলিম প্রধানকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পরদিন অক্টোবর গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব। 

সেলিম প্রধান ‘প্রধান গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান। এই গ্রুপের অধীনে পি২৪ গেইমিং নামের একটি কোম্পানি আছে, যারা রীতিমত ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো ও অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার চালিয়ে আসছিল।

তদন্তে নেমে একটি ‘গেইটওয়ের’ মাধ্যমে এক মাসে সেলিমের ব্যবসার নয় কোটি টাকা একটি ব্যাংকে জমা হওয়ার তথ্য জানতে পারার দাবি করেছে র‌্যাব।