‘জীবনে দাঁড়ানোর’ বিকল্প ভাবনা দিলেন জয়

লেখাপড়া শেষ করে শুধু চাকরির দিকে নজর না দিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে নিজের জীবিকার পাশাপাশি অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2019, 03:10 PM
Updated : 22 Oct 2019, 04:53 PM

এক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিপুল সম্ভাবনার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি।

মঙ্গলবার হোটেল র‌্যাডিসনে সিআরআইয়ের আয়োজনে ‘ইয়ং বাংলা উইথ সজীব ওয়াজেদ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের ‘ইয়ুথ অন পলিটিক্স’ সেশনে দেওয়া বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি।

জয় বলেন, “শুধু চাকরির দিকে নজর দেবেন না। আমাদের অর্থনীতি বাড়ছে। উদ্যোক্তা হন, নিজের পাঁয়ে দাঁড়ান। অন্য কারও উপর আপনার নির্ভরশীল হতে হবে না।

“সরকারের উপর নির্ভরশীল হতে হবে না, অন্য কোনও সংগঠনের উপর নির্ভরশীল হতে হবে না এবং কোনও কোম্পানির উপরও নির্ভরশীল হতে হবে না।”

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেছেন। আর কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে। তিনি নিজেও একজন তথ্য-প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।

রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে মঙ্গলবার সিআরআইয়ের আয়োজনে ‘ডিজিটাল ফিউচার অন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “আপনারা নিজেদের কোম্পানি করেন। আপনারা হয়ত ভাবতে পারেন বাণিজ্য করে দেশের এবং দেশের মানুষের কী লাভ?”

বাণিজ্য করলে অর্থনীতির লাভ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনারা তখন অন্যদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন। আপনাদের কোম্পানিতে আপনারা অন্যদের চাকরি দিতে পারবেন।

“সেজন্য আমরা চেয়েছি, তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব, তার সাথে আমরা তরুণদের আকর্ষণ করব, তরুণদের আহ্বান জানাব যে, আসো নিজের উদ্যোগে কিছু করো। দেশের জন্য কিছু করো।”

দেশে বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে সীমিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকার কথা উল্লেখ করেন জয়।

তিনি বলেন, “দেখেন আবারও সেই বিসিএসের প্রশ্নে চলে যাই। সরকারি চাকরি, বিসিএসে চাকরি কিন্তু বছরে চার থেকে পাঁচ হাজার। মাত্র, সামান্য।

“কিন্তু এই যে প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসছে তাদের কিন্তু বেশিরভাগের (সরকারি চাকরিতে) সুযোগ, সম্ভাবনাই নাই। কারণ সরকারি চাকরি মাত্র পাঁচ হাজার।”

জয় বলেন, “আপনারা যদি নিজেদের উদ্যোগে কোনও ব্যবসা করেন, কোনও ছোটখাট দেকান করেন, ফ্রিল্যান্সিংও করেন সেখান থেকে একপর্যায়ে কিছুটা ট্যাক্স দেবেন। সেই ট্যাক্স কোথায় যায়? আমাদের অর্থনীতিতেই যায়। মানুষের সেবায় কিন্তু আসে।

“এভাবে কিন্তু আপনারা নিজেদের উদ্যোগে দেশকে, দেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।”

আর উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার জন্যই ‘আওয়ামী লীগ সরকার অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে’ বলে জানান তিনি।

এ সময় তিনি সারা দেশজুড়ে কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র, ভোকেশনাল ও ডিল্পোমা শিক্ষা কেন্দ্র এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

একইসঙ্গে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, “যাতে তারা (তরুণরা) নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। ভালো চাকরি পেতে পারে। শুধু সরকারি চাকরি না। বেসরকারি চাকরি বেড়েছে। বিদেশে যাতে তারা চাকরি পেতে পারে এই ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে।

“আমরা ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। আমাদের দেশে এখন প্রায় ৬ লাখের ওপর ফ্রিল্যান্সার আছে। আমাদের দেশ কিন্তু ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যায় সারা বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।”

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় ’ইয়ং বাংলা উইথ সজীব ওয়াজেদ’ অনুষ্ঠানে প্রায় আড়াইশ তরুণ অংশ নেন; যাদের মধ্যে ছিলেন জয়বাংলা ইয়ুথ বিজয়ীরা, আইসিটি বিভাগের স্টুডেন্ট টু স্টার্ট-আপের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ তরুণ উদ্যোক্তারা।

অনুষ্ঠানের দুটি সেশনে অংশগ্রহণকারীরা সজীব ওয়াজেদ জয়কে বিভিন্ন প্রশ্ন করার সুযোগ পান। জয়ও তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যেসব সমালোচনা করা হচ্ছে তারও জবাব দেন তিনি।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান হচ্ছে না বলে সমালোচনার জবাব দিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “এটা কিন্তু ঠিক না। আমাদের বেকারত্বের হার মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থনৈতিকভাবে একে পুরো কর্মসংস্থান হিসেবেই মানা হয়। কারণ ১০০ শতাংশ কোনও সময়ই সম্ভব না।”

তরুণরা এগিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে জয় বলেন, “আপনারা তরুণরা এগিয়ে আসছেন। আপনারা বসে নাই। হাত পেতে নাই। সরকারের দিকে শুধু তাকিয়ে নাই যে সব সমস্যার সমাধান করে দাও।

“আমাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল যে, দেশের তরুণদের দেশের কাজে, দেশের মানুষের কাজে এগিয়ে আনা। আমাদের তরুণরা যাতে বসে না থাকে।”

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “এই প্রশ্নটি আমাদের কাছে সব সময় আসে যে, আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তরুণদের জন্য কী করছে? সেটার জবাব আপনারা। সেটার জবাব ইয়ং বাংলা।

“আমাদের কাছে প্রশ্ন আসে কর্মসংস্থানের যে, তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য আওয়ামী লীগ কী করছে?”

সজীব ওয়াজেদ বলেন, “তবে দেখেন, আবার আমি যেটা বলব, শুধু সরকারের কাছে হাত পেতে থাকবেন না। আমাদের একটা চিন্তাধারা ছিল বা মাইন্ডসেট ছিল, যেটা আমি বলব একটু পুরাতন মাইন্ডসেট।

“সেটা হচ্ছে যে, ইউনির্ভার্সিটিতে যাব, একটা ডিগ্রি নেব তারপর একটা চাকরি নিয়ে সারা জীবন চাকরি করে রিটায়ার করব পেনশন নিয়ে। আর কিছু করার দরকার নেই। তবে দেখেন সেটা কিন্তু আমি বলব, স্বার্থপরের মতো চিন্তা।”

সমাজের জন্য কিছু না করে শুধু নিজে চাকরি করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমার পরিবারে সেটা সম্ভব হয়নি। আমার পরিবারে… দেশের জন্য যদি তুমি কিছু না করে থাক তাহলে তুমি কিছুই করোনি। এটাই হল আমার অভিজ্ঞতা।

“তবে সবাইকে যে শুধু সমাজ সেবা করতে হবে সেটাও কিন্তু না।”

বক্তব্যে বাংলাদেশের তরুণদের, বিশেষ করে অভিভাবকদের সন্তানের চাকরি করানোর প্রতি আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন জয়।

তিনি বলেন, “আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করে খুবই গর্ব লাগে যে, অনেকেই বলে আমি এইখানে কনসাল্টিং করি করি বা আমার এই ছোট দোকান আছে। তবে আমি একটা চাকরি চাই।

“আমি এই ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা, তবে চাকরি চাই। দেখেন একটি ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সেই ইউনিয়নে বসে কিন্তু মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ইনকাম করছে। তার কি আর চাকরি প্রয়োজন আছে?”

আর চাকরির প্রতি এই আগ্রহের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “কারণ একটা আছে। আমাদের মা-বাবারা ছোটবেলা থেকে আমাদের শেখান যে, একটা ডিগ্রি নাও তারপর একটা চাকরি নাও। আর সেটা যদি না করো তুমি কিছুই করো নাই।”

এসবের বাইরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তরুণদের উদ্দেশে জয় বলেন, “আপনারা নিজের পায়ে দাঁড়ান।”