বিজিবি-বিএসএফ গোলাগুলি পদ্মায় ‘ইলিশ ধরা ঠেকাতে’

রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে গোলাগুলিতে বিএসএফের এক সদস্য নিহতের যে দাবি ভারতের পক্ষ থেকে করা হয়েছে সে বিষয়ে ‘নিশ্চিত নন’ জানিয়ে বিজিবির আঞ্চলিক কমান্ডার বলেছেন, বিষয়টির তদন্ত হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজর দেবেন তারা।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2019, 06:12 PM
Updated : 17 Oct 2019, 06:40 PM

বৃহস্পতিবার সকালে চারঘাটের শাহরিয়ার খাল এলাকায় ‘ইলিশ ধরা ঠেকানো’ নিয়ে ওই সংঘর্ষের পর বিকালে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী-বিএসএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক হয় বিজিবির।

রাতে বিজিবি-১ এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের একজন সদস্য নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন বলে তাদের আঞ্চলিক কমান্ডার পতাকা বৈঠকে দাবি করেছেন।

“তবে এর পক্ষে ভিডিও বা কোনো প্রমাণ তিনি দেখাননি। তার দাবি সত্যি হয়ে থাকলে এটা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।”

বিএসএফের একটি বিবৃতির বরাত দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্তে ওই ঘটনায় বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিং নিহত এবং আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আর বিজিবির বিবৃতিতে পুরো ঘটনার বিবরণে বলা হয়, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে চারঘাট বিওপি থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিম দিকে এবং সীমান্ত পিলার ৭৫/৩-এস থেকে ৫০০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে চারঘাট থানার শাহরিয়ার খাল এলাকায় মাছ ধরছিলেন তিন ভারতীয় জেলে। ওই সময় সেখানে মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযান চলছিল।

ওই সময় তিন জেলেকে আটক করার চেষ্টা করলেও দুইজন পালিয়ে যান। একজনকে জালসহ আটক করার পর বিজিবি কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন যে ওই জেলেরা ভারতীয় নাগিরক।

এই ছবি দিয়ে বিজিবি বলেছে, ওই স্পিডবোট দিয়ে রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাইন থেকে প্রায় ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভিতরে চলে আসেন বিএসএফ সদস্যরা। ছবিতে ডানে (চেক শার্ট পরা) বাংলাদেশি মৎস্য কর্মকর্তা।

এর কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারি ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পিডবোট নিয়ে ‘অনুমতি ছাড়া’ শূন্য রেখা অতিক্রম করে ‘অবৈধভাবে’ বাংলাদেশের ভেতরে ৬০০-৬৫০ গজ প্রবেশ করে। নদীর এ পাড়ে বিজিবি টহল দলের কাছে এসে তারা আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলেন।

“তখন বিজিবি টহল দল আটক ভারতীয় নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান। কিন্তু তারা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে তাদের উপর ৬/৮ রাউন্ড গুলি চালায় বিএসএফ।

“আত্মরক্ষার জন্য বিজিবি টহল দল পাল্টা ফাঁকা গুলি করলে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করতে করতে দ্রুত চলে যায়।”

আটক ভারতীয় নাগরিক প্রণব মণ্ডল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার ছিড়াচর গ্রামের বসন্ত মণ্ডলের ছেলে বলে জানিয়েছে বিজিবি। তাকে চারঘাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তার কাছ থেকে চার কেজি ওজনের কারেন্ট জাল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও বিজিবির বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, আটক ভারতীয়র কাছ থেকে উদ্ধার করা জাল ইলিশ শিকারে ব্যবহৃত হয়। ঘটনার সময় তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের আরিফুল বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা যেন নদীতে ইলিশ শিকার করতে না পারে সেজন্য বিজিবি সদস্যদের নিয়ে সকালে নদীতে অভিযানে যান তিনি।

“আমরা দেখতে পাই, পদ্মা-বড়ালের মোহনায় বাংলাদেশের সীমানার ভেতর একটি নৌকায় করে তিনজন জেলে ইলিশ শিকার করছে। তাদের আটকের চেষ্টা করা হলে দুইজন পালিয়ে যায়। একজনকে আটক করা সম্ভব হয়।

“খবর পেয়ে বিএসএফ সদস্যরা এসেই গুলি ছোড়া শুরু করে। জবাবে বিজিবিও তখন গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা পিছু হটে।”

পরে পতাকা বৈঠকে উভয়পক্ষ নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি মতানৈক্যের বিষয়গুলোতে তদন্ত করতে সম্মত হয়েছে বলে বিজিবি কর্মকর্তা ফেরদৌস জানান।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য ‘শিগিরই’ আবারও পতাকা বৈঠক করার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।