গ্রেপ্তার ৩ জঙ্গি ঢাকা এসেছিলেন ‘নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে’

রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার নব্য জেএমবির তিন জঙ্গি ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2019, 03:06 PM
Updated : 17 Oct 2019, 03:06 PM

পুলিশের জঙ্গিবাদবিরোধী এই ইউনিটের উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘বেশ কিছু তথ্য’ পেয়েছেন তারা।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. আবদুল্লাহ (২৪), সফিকুল ইসলাম ওরফে মোল্লাজী (৩৮) এবং মোস্তফা মহসীন অরিফ (২৫)। তাদের সবার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার তিনজন আগে পুরনো জেএমবির সদস্য ছিলেন। গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার অন্যতম আসামি সোহেল মাহফুজের মাধ্যমে তারা নব্য জেএমবিতে নাম লেখান। নব্য জেএমবির নেতা সোহেল মাহফুজ বর্তমানে কারাগারে আছেন।

উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে এই জঙ্গিদের একটি অংশ মাঝেমধ্যে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশে এসে তারা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে।

“এমনই একটি পরিকল্পনা নিয়ে ওই তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসে। কিন্তু গোয়েন্দারা আগে থেকে খবর পেয়ে যাওয়ায় অভিযান চালিয়ে তদের গ্রেপ্তার করা হয়।”

মোল্লাজী ও আরিফ কিছুদিন আগে ভারতে গিয়ে ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণ’ নিয়ে দেশে ফেরেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “দেশে এসে নব্য জেএমবির সদস্য শাহিন আলম ওরফে আলামিন, জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন, আরিফ, কবির, জহিরুল ওরফে মামুনুর রশিদ ও হারুনসহ কয়েকজনকে নিয়ে আবার তারা ভারতে যায়। সেখানে ঝাড়খণ্ড, কেরালাসহ বিভিন্ন রাজ্যে ভারতীয় জঙ্গিদের সঙ্গে যৌথভাবে তাদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ চলে।”

এদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন ২০১২ সালে বান্দরবানে জেএমবির কোন্দলে নিহত সালমান ওরফে  তারেক হত্যা মামলার আসামি।

আর জহিরুল ওরফে মামুনুর রশিদ ২০১৫ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে কলেজ শিক্ষিকা কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাস হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

গত জানুয়ারিতে কৃষ্ণা কাবেরী হত্যা মামলার রায়ে গুলশানের হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপক এম জহিরুল ইসলাম পলাশের ফাঁসির রায় আসে।

জহিরুল এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।

সাইফুল ইসলাম বলেন, “জহিরুল ওরফে মামুনুর রশিদ জামিন পাওয়ার পর জেএমবির সহায়তা নিয়ে পালিয়ে ভারতে যান। সেখানে তিনি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।”

গত জুনে মহসিন, আল আমিন ও জহিরুল ভারতীয় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মোল্লাজী ও অরিফ বাংলাদেশে চলে আসেন। তারপর তারা আব্দুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ‘সাংগঠনিক তৎপরতা’ শুরু করেন বলে জানান উপ কমিশনার সাইফুল। 

তিনি বলেন, “বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে তারা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করত। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে নব্য জেএবির সদস্যদের নিয়মিত যোগাযোগ হত বলেও আমরা তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।”

গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান।