গুলশান হামলার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলায় বিচার শুরুর একাদশ মাসে রাষ্ট্রপক্ষের শেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2019, 01:39 PM
Updated : 21 Oct 2019, 12:37 PM

তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইতি ঘটবে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম এই হামলার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের পরিদর্শক কবির বৃহস্পতিবার জবানবন্দি দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। তিনি মামলার ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩তম সাক্ষী।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, “নিহত হামলাকারী ও হলি আর্টিজানের একজন নিহত কর্মচারীর চুল ও রক্তের ডিএনএ নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষা করে প্রতিবেদন চেয়ে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (এফবিআই) পাঠাই।

“কিন্তু তারা সেখান থেকে কোনো প্রতিবেদন বাংলাদেশে না পাঠালে একই নমুনা পরীক্ষার উত্তর দেয় পুলিশের অপরাধ, তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের কাছ থেকে আমি চুল ও রক্তের নমুনার ডিএনএ ও ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পাই ।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যের সমর্থনে জমা দিলে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান তা গ্রহণ করেন।

এছাড়া তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ের সিডি, জব্দ করা এবং ফরেনসিক করা ৭টি মোবাইল ফোন সেটের মধ্যে তিনটির ফরেনসিক প্রতিবেদন ও সেট প্রদর্শনী আকারে জমা দেন। জব্দ করা আরও দুটি আলামতও প্রদর্শনী হিসাবে দাখিল করেন।

তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি গ্রহণের পর বিচারক মজিবুর রহমান আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাক্ষ্য শেষ করতে তদন্ত কর্মকর্তার কমপক্ষে আরও দুই দিন লাগতে পারে। এরপর শুরু হবে তাকে আসামি পক্ষের জেরা।

তারপরে হবে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন। এরপর যুক্তিতর্ক শেষে শেষে রায়ের পর্যায়ে পৌঁছাবে মামলাটি।

হামলায় আহত গোয়েন্দা পুলিশের এসি রবিউল ইসলামকে সহকর্মীরা নিয়ে যান হাসপাতালে। ওই রাতেই মৃত্যু হয় তার।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে পাঁচ তরুণের সশস্ত্র হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করা হয়। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

নজিরবিহীন ওই হামলা দেশে জঙ্গিবাদের বিপদজনক বিস্তারের মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে। বড় ওই ধাক্কা বাংলাদেশকে বদলে দেয় অনেকখানি।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির গত বছরের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

চিহ্নিত বাকি ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। নিহতদের মধ্যে হামলাকারী ৫ তরুণ রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েলও রয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে ‘অস্থিতিশীল করা’ এবং বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।