সম্রাটের একজন আইনজীবী বলেছেন, কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে এই যুবলীগ নেতার অফিসের ফ্রিজে মদ থাকার কথা নয়, মাছ-মাংস থাকার কথা।
মঙ্গলবার শুনানি শেষে অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলায় সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন।
আর সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকে মাদক আইনের মামলায় পাঠানো হয় ৫ দিনের রিমান্ডে।
১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আত্মগোপনে গিয়েছিলেন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা সম্রাট। ৭ অগাস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
এরপর সম্রাটকে দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিন এবং আরমানকে মাদক এক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু সম্রাট অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ায় রিমান্ড শুনানি পিছিয়ে যায়।
বুধবার সেই শুনানির জন্য সম্রাটকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হলে যুবলীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী সেখানে ভিড় করে। আদালতের ফটকের বাইরে ও জনসন রোডে জটলা করে তারা স্লোগান তোলেন- ‘সম্রাট ভাইয়ের মুক্তি চাই’, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’।
ভিড়ে ঠাসা ২৭ নম্বর মহানগর হাকিমের এজলাস কক্ষে বেলা ১টায় প্রথমে মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনছারী মাদক ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় সম্রাটকে গ্রেপ্তার দেখান। আরমানকে মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় কয়েকদিন আগেই।
রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানির জন্য পাঁচ মিনিট পর এজলাসে ওঠেন মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন। সম্রাট ও আরমান তখন কাঠগড়ায়।
প্রথমেই সম্রাটের হাতকড়া খোলার আদেশ দিতে বিচারককে অনুরোধ করেন তার একজন আইনজীবী। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে বিচারক মূল শুনানিতে য়াওয়ার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে সম্রাটের পক্ষে শুনানি করতে দাঁড়িয়ে আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন হীরা বলেন, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর হাজার হাজার কর্মী সম্রাটকে ‘অন্তর থেকে ভালোবাসে’।জনপ্রিয়তাই সম্রাটের ‘কাল’ হয়েছে। মামলাগুলো ‘কুচক্রীদের ইর্ষার ফল’ ।
“আমি যুবলীগে তার কমিটিতে মহিলা বিষয়ক ও পরে আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলম। খুব কাছ থেকে তাকে আমি চিনি। আমরা এখন সরকারি দল করি না বিারোধী দল করি বুঝতে পারছি না। অফিসের ফ্রিজ খুলে কীভাবে মদ পেল র্যাব? ওই ফ্রিজে তো মাছ মাংস ছিল, যা কর্মীরা এনে দিত।”
এ কথা শুনে রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন আইনজীবী একসঙ্গ প্রশ্ন করেন- অফিসে মাছ মাংস কেন? ওটা কি বাড়ি?
‘রিমান্ডে নিলে রিস্ক নেওয়া হবে’
সম্রাটের পক্ষে আইনজীবী গাজী জিল্লুর রহমান বলেন, “২০ বছর আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। তার যকৃতে প্রচণ্ড সমস্যা। র্যাব ও পুলিশের ক্যাসিনো অভিযান শেষ হয়ে গেছে। তল্লাশিও হয়েছে বেশ কয়েক দফা। তাহলে এখন রিমান্ডে নিয়ে কী লাভ? কী তথ্য তার কাছ থেকে উদ্ধার বাকি রয়েছে?
প্রয়োজন হলে সম্রাটকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে মত দিয়ে জিল্লুর বলেন, “অস্ত্র ও মাদক দ্রব্যের বিষয়ে তার নলেজ, পজেশন বা কন্ট্রোল ছিল না।”
সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা
গাজী জিল্লুরের পর আবার কথা বলতে শুরু করেন আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন হীরা।
তিনি বলেন, “মিডিয়া বিভিন্ন সময় সম্রাটের বিভিন্ন দান ও জনদরদী কল্যাণ কাজের প্রচার করেছে। কিন্তু এখন সেই মিডিয়াই সম্রাটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”
শুনানির সময় সম্রাটের পক্ষে বেশ কয়েকজন নবীন আইনজীবী বার বার হৈচৈ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকলে বিচারক তাদের শান্ত করেন।
এ শুনানি শোনার জন্য আদালতের কর্মচারীরাও বিচারকের দুইপাশে ভিড় করেন। শুনানি শেষে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর মিছিল আর স্লোগানের মধ্যে সম্রাটকে আদালত থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।