ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে দেহরক্ষী হওয়া যাবে না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে কারও দেহরক্ষী হওয়া যাবে না, বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তাকর্মীর চাকরিতেও সেই লাইসেন্স ব্যবহার করা যাবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2019, 01:38 PM
Updated : 14 Oct 2019, 05:25 PM

বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধে এই সংক্রান্ত নীতিমালা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে লাইসেন্স করা অস্ত্র প্রকাশ্যে প্রদর্শন না করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীমকে সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেপ্তারের ২৪ দিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা এল।

গত ২০ সেপ্টেম্বর জিকে শামীম ও তার ৭জন দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে মোট আটটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, এসব অস্ত্রের সবগুলোই বৈধ এবং এগুলো দেহরক্ষীদের নিজ নিজ নামে লাইসেন্স করা, কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে নয়।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি দুটির বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স কখনোই পেতে পারেন না। আর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধানকে। আর যারা সেই অস্ত্র ব্যবহার করবেন, তাদের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সুপারিশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়।

জিকে শামীমকে গ্রেপ্তারের সময় তার এই বৈধ অস্ত্রটি পাওয়া গিয়েছিল

বেসরকারি বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থায় ব্যক্তিগত লাইসেন্সধারীদের চাকরি করতে দেখা যায়। একটি সংস্থার ব্যবস্থাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাধারণত যাদের অস্ত্রের লাইসেন্স আছে, তাদেরই তারা নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের প্রাধান্য দেন তারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি নিজ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবেন না।”

এমনটি ঘটলে তার অস্ত্রের লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনেই রয়েছে একজনের অস্ত্র আরেকজন ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে বডিগার্ড বলে কোনো কথা নেই।”

ভয় দেখাতে লাইসেন্স করা অস্ত্র প্রদর্শনের বহু ঘটনাও ঘটেছে দেশে। কোনো কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছেন বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি স্বীয় লাইসেন্সে এন্ট্রিকৃত অস্ত্র আত্মরক্ষার নিমিত্ত নিজে বহন/ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অন্যের ভীতি/বিরক্তি উদ্রেক করতে পারে এরূপভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না।”

নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশে কারও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে তার শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্যের পাশাপাশি টানা তিন করবছরে কমপক্ষে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা আয়কর দিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণ জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন বলেন, কতগুলো বৈধ অস্ত্র রয়েছে, এটা তার জানা নেই। তবে তিনি দায়িত্বে থাকার সময় অস্ত্রের সংখ্যার হিসাব রাখতে একটি ডাটাবেইজ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন।

ওই ডাটাবেইজের বর্তমান অবস্থা জানতে বর্তমান স্বরাষ্ট্র সচিবকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।